শিরোনাম: ভাতের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করা আর্সেনিক: উদ্বেগের কারণ ও প্রতিকার
বাংলাদেশে খাদ্য হিসেবে ভাতের ব্যাপক চাহিদার প্রেক্ষাপটে, ভাতে আর্সেনিকের উপস্থিতি জনস্বাস্থ্যর জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ। সম্প্রতি, একটি গবেষণা প্রতিবেদনে ভাতের মাধ্যমে মানুষের শরীরে আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু প্রবেশের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণাটি মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাজারজাত করা চালের নমুনা বিশ্লেষণ করে এই তথ্য দিয়েছে। তবে, যেহেতু ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য, তাই এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চালে আর্সেনিক ও ক্যাডমিয়ামের মাত্রা স্বাস্থ্যবিধির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটি বেশি উদ্বেগের কারণ। আর্সেনিক মানবদেহে প্রবেশ করলে ডায়াবেটিস, স্নায়ু দুর্বলতা, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস এবং হৃদরোগের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে।
এমনকি গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এটি গর্ভপাত বা অপরিণত বয়সে সন্তান জন্মদানের ঝুঁকিও বাড়ায়।
মার্কিন খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ) শিশুদের জন্য চালের সিরিয়ালে আর্সেনিকের মাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু রান্নার জন্য ব্যবহৃত চালের ক্ষেত্রে তেমন কোনো বিধিনিষেধ নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের খাদ্যে আর্সেনিকের প্রধান উৎস হলো ভাত।
গবেষণায় আরও জানা যায়, সাদা চালের তুলনায় বাদামী চাল এবং কিছু অঞ্চলের (যেমন ইতালির আরবোরিও চাল, দক্ষিণ-পূর্ব আমেরিকার চাল) চালে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি থাকে। অন্যদিকে, ক্যালিফোর্নিয়ার চালের নমুনায় ভারী ধাতুর পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চাল রান্নার পদ্ধতি আর্সেনিকের পরিমাণ কমাতে পারে। যেমন, অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করে ভাত রান্না করলে এবং রান্নার পর সেই পানি ফেলে দিলে আর্সেনিকের প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত দূর করা যেতে পারে। এছাড়া, চাল রান্নার আগে ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখলে আর্সেনিকের পরিমাণ আরও কমানো সম্ভব।
আর্সেনিক ছাড়াও, চালের মাধ্যমে ক্যাডমিয়াম শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ক্যাডমিয়াম কিডনি, হাড়, পাকস্থলী এবং ফুসফুসের ক্ষতি করতে পারে। তাই, খাদ্য হিসেবে চাল গ্রহণের ক্ষেত্রে সচেতনতা জরুরি।
এই পরিস্থিতিতে, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ভোক্তাদের চাল কেনার সময় উৎপত্তিস্থল এবং আর্সেনিকের পরিমাণ সম্পর্কে অবগত থাকা উচিত।
বাজারে উপলব্ধ বিভিন্ন প্রকার চাল পরীক্ষা করে আর্সেনিকের মাত্রা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি করা যেতে পারে।
মনে রাখতে হবে, আর্সেনিকমুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা আমাদের সকলের অধিকার। তাই, চালের মাধ্যমে আর্সেনিক গ্রহণের ঝুঁকি কমাতে হলে, চাল নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে এবং রান্নার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন