ছেলেবেলায় আধুনিক প্রযুক্তির অভাব: এক কিশোরের সামাজিক জীবন ও মায়ের কঠোর নিয়ন্ত্রণ।
আজকের যুগে স্মার্টফোন (smartphone) এবং সামাজিক মাধ্যম (social media) জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিশোর-কিশোরীদের বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, নতুন কিছু শেখা কিংবা বিনোদন – সবকিছুতেই যেন এর অবাধ বিচরণ।
কিন্তু যদি কোনো কিশোর বা কিশোরীর স্মার্টফোন ব্যবহারের সুযোগ না থাকে, তাহলে কেমন হয়? সম্প্রতি এমন একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, যেখানে এক কিশোর তার মায়ের স্মার্টফোন ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার কারণে সামাজিক জীবনে একাকীত্ব অনুভব করছে।
কিশোরটির মা সবসময় তাকে আগলে রাখতে চান। কিশোরের মতে, এর কারণে তার সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তার বন্ধুদের মতো টিকটক (TikTok) বা স্ন্যাপচ্যাট (Snapchat) ব্যবহারের সুযোগ না পাওয়ায় সে বন্ধুদের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
বিষয়টি হয়তো অনেকের কাছে সামান্য মনে হতে পারে, কিন্তু কিশোরের কাছে এটি গভীর উদ্বেগের কারণ। তার মনে হয়, মা যেন ইচ্ছাকৃতভাবে এমনটা করছেন।
সাধারণত, বাবা-মায়ের মধ্যে বিচ্ছেদ হলে সন্তানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা যায়। এখানেও তেমনটা ঘটেছে। কিশোরের বাবা একসময় স্মার্টফোন ব্যবহারের পক্ষে ছিলেন, কিন্তু মায়ের কঠোর মনোভাবের কারণে কিশোর সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত।
এই পরিস্থিতিতে কিশোরের মনে প্রশ্ন জেগেছে – মা কি অতিরিক্ত জেদি? নাকি সে নিজেই বিষয়টি অতিরঞ্জিত করছে?
বিশেষজ্ঞদের মতে, কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েরা বাবা-মায়ের থেকে একটু দূরে যেতে চায়, যা তাদের বেড়ে ওঠার একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তারা নিজেদের ভালো চায়, এবং বাবা-মা চান তাদের ভালো হোক।
এই দুইয়ের মাঝে একটি সমঝোতায় আসা প্রয়োজন। এখানে মায়ের উদ্দেশ্য হয়তো সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কিন্তু কিশোরের চাওয়া ভিন্ন।
মনোবিদ ও শিশু-কিশোর বিশেষজ্ঞ গ্রাহাম মিউজ (Graham Music) এই প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন। তার মতে, “বর্তমান সমাজে প্রযুক্তি, স্ক্রিন ও সামাজিক মাধ্যম নিয়ে অনেক বেশি আতঙ্ক তৈরি করা হয়।
ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আনা যেতে পারে, তবে কিশোর-কিশোরীদের স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে সম্পূর্ণভাবে বিরত রাখা উচিত কিনা, তা নিয়ে ভালোভাবে আলোচনা করা দরকার। এক্ষেত্রে মা-বাবার মধ্যে ভালো যোগাযোগ এবং পারস্পরিক বোঝাপড়া খুবই জরুরি।”
আসলে, মূল বিষয় হল কিশোর ও তার মা-বাবার মধ্যে আলোচনা হওয়া। তারা যেন বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে পারে এবং তাদের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়।
মিউজ আরও বলেন, “পরিবারে যদি আলোচনা করার মতো পরিবেশ থাকে, যেখানে আবেগ, আশা এবং বন্ধুত্বের মতো বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা যায়, তাহলে স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।
অবশ্যই স্ক্রিন আসক্তি তৈরি করতে পারে, তবে যাদের মানসিক সমস্যা (যেমন- আঘাত, অবহেলা বা মানসিক চাপ) রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি উদ্বেগের কারণ হতে পারে।”
সুতরাং, এখানে মা-ও যেমন তার সন্তানের ভালো চান, তেমনি কিশোরেরও নিজস্ব কিছু চাহিদা রয়েছে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও বোঝাপড়াই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে।
মা যদি সন্তানের কথা শোনেন এবং কিশোর যদি মায়ের উদ্বেগের কারণ বুঝতে পারে, তবে তাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
মিউজের মতে, “সামাজিক মাধ্যম ও স্মার্টফোনের খারাপ দিক থেকে বাঁচতে হলে প্রয়োজন একটি সুখী ও আত্মবিশ্বাসী কিশোর, যে নিজের উপর বিশ্বাস রাখতে শিখেছে।”
সুতরাং, অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করা এবং তাদের ভালো-মন্দ দুটো দিক সম্পর্কে অবগত করা। একইসঙ্গে তাদের সামাজিক জীবনকে গুরুত্ব দেওয়া এবং প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া।
তথ্য সূত্র: The Guardian