বিধবা নারীর শোক আর বিভ্রমের এক মর্মান্তিক গল্প: মেরী অ্যান কেনির অভিজ্ঞতা
হঠাৎ স্বামীর মৃত্যু, তারপর এক গভীর মানসিক যন্ত্রণা। শোকের অন্ধকারে নিমজ্জিত মেরী অ্যান কেনির জীবন যেন ওলট-পালট হয়ে গিয়েছিল।
২০০৮ সালে তিনি যখন জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়ে ছিলেন, ডাবলিনের বাসিন্দা মেরীর স্বামী জন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর সবকিছু কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়।
স্বামী হারানোর শোকের মধ্যেই মেরীর জীবনে আসে নতুন এক বিপর্যয়। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি একটি বিশেষ ওষুধ সেবন করা শুরু করেন।
ওষুধটি ছিলো তার উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা কমাতে সহায়ক। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়েন। শরীরে এক অজানা জ্বালা অনুভব করতে থাকেন, যা তাকে বিনিদ্র করে তোলে।
এরপর ধীরে ধীরে তিনি মানসিক উদ্বেগে ভুগতে শুরু করেন।
দিনের পর দিন তিনি প্যারানয়ায় আক্রান্ত হতে থাকেন। পরিচিতজনদের প্রতি সন্দেহ জাগতে শুরু করে।
এমনকি, যারা তাকে সাহায্য করতে চেয়েছিল, তাদেরও তিনি সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেন। তিনি এতটাই হতাশ হয়ে পড়েন যে, একসময় তার মনে হতে থাকে, তিনি হয়তো তার সন্তানদের ক্ষতি করছেন।
তাদের খাবারে বিষ মিশিয়ে মারার কথা পর্যন্ত তিনি ভাবতে শুরু করেন।
মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় মেরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি চিকিৎসা পান, কিন্তু তার মানসিক অবস্থার উন্নতি হয়নি।
বরং, তিনি আরও হতাশ হয়ে পড়েন। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার সময়, তিনি তার এই অদ্ভুত ধারণার কথা প্রকাশ করেন। এর ফলস্বরূপ, তিনি আরও বেশি মানসিক আঘাত পান।
হাসপাতালে থাকাকালীন সময়ে, মেরী অ্যান তার সন্তানদের থেকে দূরে ছিলেন। সন্তানদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা তাকে আরও বেশি কষ্ট দেয়।
তিনি এতটাই ভেঙে পড়েছিলেন যে, আত্মহত্যার কথা পর্যন্ত ভেবেছিলেন। অবশেষে, চিকিৎসকদের পরামর্শে তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর, তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করেন।
বর্তমানে মেরী অ্যান সুস্থ জীবনযাপন করছেন এবং তার সন্তানদের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক স্থাপন করেছেন।
তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা লিখে একটি বই প্রকাশ করেছেন, যা মানসিক স্বাস্থ্য এবং শোকের সঙ্গে লড়াই করা মানুষদের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।
মেরীর গল্প আমাদের দেখায় যে, শোক আর মানসিক আঘাতের গভীরতা যতই হোক না কেন, ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা সবসময় থাকে। কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে জীবনকে নতুন করে সাজানো সম্ভব।
তথ্য সূত্র: The Guardian