অফিসের চার দেওয়ালের গন্ডি পেরিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি, এমন এক জীবনের সন্ধান! আজকাল অনেকেই যেন খুঁজে ফিরছেন এই নতুন পথের ঠিকানা।
কর্মজীবনে শান্তি আর প্রকৃতির সান্নিধ্য— দুটোই কি একসঙ্গে পাওয়া সম্ভব? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে চলুন, শুনি কয়েকজন মানুষের গল্প, যাঁরা প্রচলিত পেশা ছেড়ে বেছে নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে কাজ করার সুযোগ।
প্রথমেই আসা যাক, ওয়ারউইকশায়ারের কান্ট্রিসাইড রেঞ্জার, ৫৯ বছর বয়সী স্টিভ কেলের কথায়। একসময় ব্যাংকের চাকরি করতেন তিনি।
জীবনটা একঘেয়ে লাগছিল, তার উপর শরীরে বাসা বাঁধে কঠিন রোগ। এরপরই তিনি নতুন করে বাঁচতে শুরু করেন। প্রকৃতির টানে, ভালোবাসার টানে তিনি যোগ দেন কান্ট্রিসাইড ম্যানেজমেন্টের কোর্সে।
এখন তিনি প্রকৃতির কাছাকাছি, গাছপালা আর বন্যপ্রাণীর সাথে সময় কাটান। তাঁর কথায়, “আমি অফিসের বদ্ধ পরিবেশ থেকে মুক্তি পেয়েছি, প্রকৃতির মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিই, এতেই আমি খুশি।”
এরপরের গল্পটি স্কটল্যান্ডের অ্যাঞ্জেলা মাস্কের। একসময় তিনি কাজ করতেন কারাগারে।
শীতকালে দিনের আলো ফোটার আগেই কাজে যাওয়া, আবার ফেরার পথেও দিনের দেখা নেই—এসবের মাঝে হাঁপিয়ে উঠেছিলেন তিনি। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসাই তাঁকে নতুন পথ দেখায়।
তিনি এখন র্যামলার্স স্কটল্যান্ড-এর কমিউনিটি আউটরিচ অফিসার। উদ্বাস্তু, আশ্রয়প্রার্থী এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য হাঁটাচলার কর্মসূচি তৈরি করেন তিনি। অ্যাঞ্জেলার কথায়, “প্রকৃতি যেন সবার জন্য, এখানে সবাই আপন।”
আরেকজন হলেন মিশেল বার্টন। আগে একটি পরিবার বিষয়ক প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তিনি।
এরপর তিনি মন দেন প্রকৃতির কাজে। এখন তিনি জেইমি’স ফার্ম-এর থেরাপিউটিক কোঅর্ডিনেটর হিসেবে কাজ করেন। এখানে শিশুরা প্রকৃতির কাছাকাছি এসে নতুন কিছু শেখে, যা মিশেলের চোখে এনে দেয় অন্যরকম আনন্দ।
এবার আসা যাক, ৩১ বছর বয়সী জয় রাঠোডের গল্পে। আগে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি।
অফিসে বসে থাকতে ভালো লাগত না তাঁর। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন এবং একটি হর্টিকালচার ও ল্যান্ডস্কেপিং-এর প্রশিক্ষণ নেন।
এখন তিনি সেন্ট জেমস পার্কের একজন পার্ক অফিসার। তাঁর কাজ—পার্কের রক্ষণাবেক্ষণ করা, দর্শকদের নিরাপত্তা দেখা, এবং প্রকৃতির যত্ন নেওয়া। জয় বলেন, “দিনের শেষে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়, তবে মানসিক শান্তি পাই।”
সবশেষে, ৬০ বছর বয়সী ম্যান্ডি অ্যাবটের কথা। একসময় একটি রেস্টুরেন্টে রান্নার কাজ করতেন তিনি।
এখন তিনি নর্থ ইয়র্কশায়ারের একটি এস্টেটে ফ্যালকনরি বিভাগের প্রধান। এখানে তিনি শিকারী পাখির দেখাশোনা করেন।
পাখির সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। ম্যান্ডির কথায়, “আমি এই কাজটা খুব উপভোগ করি।”
এই মানুষগুলোর গল্প আমাদের নতুন করে ভাবতে শেখায়। অফিসের চার দেয়ালের বাইরেও যে জীবনের অনেক রং থাকতে পারে, তা তাঁরা প্রমাণ করেছেন।
হয়তো শুরুতে কিছুটা আর্থিক কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়েছে, কিন্তু কাজের প্রতি ভালোবাসা, প্রকৃতির সান্নিধ্য আর মানসিক শান্তির কাছে সেসব কিছুই নয়।
আমাদের চারপাশে এমন অনেক সুযোগ রয়েছে, যা হয়তো আমরা খুঁজে দেখি না। প্রয়োজন শুধু একটু সাহস, নিজের ভেতরের স্বপ্নকে সত্যি করার চেষ্টা।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান