বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি বাড়ি কেনার পর এক দম্পতির দুঃস্বপ্নের অভিজ্ঞতা
আবাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিশেষ করে যেখানে একটি পরিবারের একটি স্থায়ী ঠিকানা তৈরির স্বপ্ন জড়িত থাকে।
উন্নত বিশ্বে প্রায়ই বন্ধকী বাড়ির ধারণা দেখা যায়, যেখানে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ব্যাংক বাড়িটি পুনরুদ্ধার করে। সম্প্রতি, এমন একটি ঘটনার শিকার হওয়া এক দম্পতির গল্প জানা গেছে।
প্যারিস আর্ল এবং তার স্বামী তাদের স্বপ্নের বাড়ি খুঁজে বের করার পর কিভাবে এক দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন, আসুন সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাক।
আসল পরিকল্পনা ছিল নিজেদের পছন্দ মতো একটি বাড়ি তৈরি করা। কিন্তু বাজেট বেড়ে যাওয়ায় তারা একটি পুরোনো বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নেন।
তাদের রিয়েল এস্টেট এজেন্ট তাদের কিছু বাড়ি দেখান এবং তাদের পছন্দসই একটি বাড়ি খুঁজে পাওয়া যায়। বাড়িটিতে ছিল কাঠ-খোদাই করা মেঝে এবং একটি সুইমিং পুল।
তবে একটি সমস্যা ছিল, বাড়িটি বন্ধকী তালিকায় ছিল।
শুরুতে বাড়িটি দেখে আর্লের তেমন কোনো সমস্যা মনে হয়নি। তাদের মনে হয়েছিল, সামান্য কিছু মেরামতের মাধ্যমেই বাড়িটিকে বাসযোগ্য করে তোলা সম্ভব।
তারা যখন বাড়িটি দেখতে যান, তখন তারা মেঝেতে কিছু ভাঙা অংশ দেখতে পান, কিন্তু তাদের মনে হয়েছিল, এটি তেমন বড় কোনো সমস্যা নয়। তারা দ্রুতই বাড়িটি পছন্দ করে ফেলেন এবং কেনার জন্য প্রস্তাব দেন।
কিন্তু এরপরই আসল ঘটনা শুরু হয়। ব্যাংক জানায়, ক্রেতাকে নগদ অর্থে পুরো মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এছাড়াও, বাড়ির মেরামতের জন্য কি কি করতে হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য ব্যাংক দিতে রাজি ছিল না।
অন্যান্য অনেক আগ্রহী ক্রেতা থাকায় আর্ল এবং তার পরিবারকে সে সময় আর সুযোগ দেওয়া হয়নি।
কিছুদিন পর, ব্যাংক আবার নিলামের ঘোষণা দেয়। আর্ল এবং তার স্বামী আবারও বাড়িটি দেখতে যান। তারা ভালোভাবে জানতেন, মেরামতের খরচ তাদের নিজেদের বহন করতে হবে।
তাই তারা কিছু ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে যান, যাতে তারা ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারেন।
তখনই তারা বুঝতে পারেন, ক্ষতির পরিমাণ তাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। বিদ্যুতের তার কাটা ছিল, পানির কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছিল, জানালা ভাঙা ছিল, মেঝে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, পুলের হিটারও কাজ করছিল না এবং পুরোনো একটি যন্ত্র থেকে পানি পড়ার কারণে অনেক বড় ক্ষতি হয়েছিল।
আর্লের ধারণা, আগের মালিকরা ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়ির ক্ষতি করেছিলেন, যেন কেউ এটি ব্যবহার করতে না পারে।
এতসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, আর্ল এবং তার স্বামী বাড়িটি কেনার সিদ্ধান্ত নেন। তারা ঠিকাদারদের কাছ থেকে খরচ সম্পর্কে ধারণা নেন এবং মেরামতের একটি তালিকা তৈরি করেন।
এই মেরামতের খরচ প্রায় ২ লক্ষ মার্কিন ডলারের মতো হবে বলে জানা যায়, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ২ কোটি টাকার সমান।
আর্ল জানান, তারা বাড়িটির জন্য বীমা করেছিলেন এবং জানতে পারেন, আগের মালিকও একই কোম্পানির বীমা ব্যবহার করতেন।
বীমা কোম্পানির মাধ্যমে তারা ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারেন। রিয়েল এস্টেট এজেন্টও কিছু অনুমতিপত্র সংগ্রহ করেন, যা ক্ষতির সময়সীমা জানতে সাহায্য করে।
আর্ল এই ঘটনার একটি ভিডিও তৈরি করে টিকটকে পোস্ট করেন, যা দ্রুত ভাইরাল হয়। ভিডিওটিতে প্রায় ১১ লক্ষ ভিউ হয়।
অনেকেই তাদের বাড়িটি সম্পর্কে নানা মন্তব্য করতে শুরু করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন, যিনি তাদের আগের মালিকদের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন। তিনি আর্লকে ছবি দেখান এবং বাড়ির ক্ষতির সময় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন।
টিকটক এর মাধ্যমে আমরা যাদের সাহায্য পেয়েছি, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
বর্তমানে, আর্ল এবং তার স্বামী বাড়িটি মেরামতের কাজ শুরু করেছেন। তারা একসঙ্গে সব কাজ করছেন না, বরং ধীরে ধীরে করছেন।
তারা চান, বাড়িটিকে নিজেদের মতো করে সাজাতে এবং নতুন স্মৃতি তৈরি করতে। আর্ল জানান, তারা আগের মালিকদের প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করেন না, বরং তাদের জীবনে ভালো কিছু হোক, এমনটাই চান।
এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, বন্ধ হয়ে যাওয়া বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে অনেক ঝুঁকি থাকে। তাই, বাড়ি কেনার আগে ভালোভাবে সবকিছু যাচাই করা এবং মেরামতের খরচ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: পিপল