পুরুষালী টাক কি মায়ের কাছ থেকেই আসে? জেনে নিন আসল সত্যি
পুরুষালী টাক (Male Pattern Baldness) একটি পরিচিত সমস্যা, যা অনেক পুরুষের কাছে উদ্বেগের কারণ। সাধারণত, মাথার সামনের দিকে চুল পাতলা হতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে মাথার উপরিভাগে টাক পড়ে যায়।
অনেকেই মনে করেন, এই সমস্যা বুঝি মায়ের কাছ থেকে পাওয়া যায়। তাহলে, এই ধারণার সত্যতা কতটুকু? চলুন, বিশেষজ্ঞের মতামত জেনে নেওয়া যাক।
পুরুষালী টাকের কারণ
পুরুষালী টাক মূলত একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা শুধু একটি কারণে হয় না। ত্বক বিশেষজ্ঞ ড. থিভোস সোকরাটাস (Dr. Thivos Sokratous), যিনি Ouronyx-এর একজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং চুল পড়া নিয়ে কাজ করেন, তিনি এই বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন।
মায়ের জিন এবং পুরুষালী টাক
আমাদের শরীরে দুটি ক্রোমোজোম থাকে, যা আমাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য তৈরি করে। পুরুষদের ক্ষেত্রে একটি X ক্রোমোজোম মায়ের কাছ থেকে এবং একটি Y ক্রোমোজোম বাবার কাছ থেকে আসে।
ড. সোকরাটাস বলেছেন, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, মায়ের কাছ থেকে আসা X ক্রোমোজোমের একটি জিন (androgen receptor gene) পুরুষালী টাকের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত।
এই জিনের কারণে প্রায় ৭০% পর্যন্ত টাক পড়ার ঝুঁকি থাকে। তবে, তিনি আরও যোগ করেন, “পুরুষালী টাক শুধু একটি জিনের কারণে হয় না। মা ও বাবা উভয়ের জিন এবং অন্যান্য কিছু কারণের সমন্বয়ে এটি ঘটে।”
অন্যান্য কারণ
পুরুষালী টাকের পেছনে হরমোনেরও একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে, যখন মাথার ত্বকে টেস্টোস্টেরন সক্রিয় টেস্টোস্টেরনে (active testosterone) রূপান্তরিত হয়, তখন চুল পড়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
অতিরিক্ত স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যা এই প্রক্রিয়াকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এছাড়াও, থাইরয়েডের সমস্যা বা অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণেও চুল পড়তে পারে।
জীবনযাত্রার প্রভাব
পুরুষালী টাকের ক্ষেত্রে পরিবেশগত কিছু কারণও প্রভাব ফেলে। আপনার খাদ্যভ্যাস এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
শরীরে যথেষ্ট পরিমাণে জিঙ্ক (zinc), ভিটামিন ডি (vitamin D), আয়রন (iron) এবং বি ভিটামিন (B vitamins) সরবরাহ করা প্রয়োজন। খাদ্যতালিকায় এই পুষ্টি উপাদানগুলোর অভাব থাকলে চুল পড়ার সমস্যা বাড়তে পারে।
চিকিৎসা ও পরামর্শ
আপনি যদি চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত হন, তাহলে এর কারণ জানার জন্য কিছু রক্ত পরীক্ষা (blood tests) করাতে পারেন।
এর মাধ্যমে বোঝা যাবে, চুল পড়ার কারণ জিনগত নাকি হরমোনগত। ড. সোকরাটাস পরামর্শ দেন, “এর মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন, কোনো রোগের কারণে এমনটা হচ্ছে কিনা, যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এছাড়াও, আগামী ৫, ১০ বা ১৫ বছরে আপনার কী হতে পারে, সে সম্পর্কে ধারণা পেতেও এটা সাহায্য করবে।”
সুতরাং, পুরুষালী টাকের পেছনে মায়ের জিনের একটা ভূমিকা থাকলেও, এটি সম্পূর্ণভাবে মায়ের কাছ থেকে আসে না। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, যেখানে জিনগত কারণ, হরমোন এবং জীবনযাত্রার বিভিন্ন দিক জড়িত।
চুল পড়া নিয়ে চিন্তিত হলে, অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
তথ্য সূত্র: The Guardian