পাকিস্তানের পাঞ্জাবে ঐতিহ্যপূর্ণ ষাঁড় দৌড়: গ্রামবাংলার সংস্কৃতির এক ঝলক।
পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের আটোক জেলার মাললে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় এক মনোমুগ্ধকর ষাঁড় দৌড় প্রতিযোগিতা। রুক্ষ মাঠ, উত্তেজনায় ভরপুর দর্শক আর ষাঁড়দের দুরন্ত গতি – সব মিলিয়ে এই আয়োজন যেন গ্রামবাংলার সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। গত ১৫ই মে, ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত হওয়া এই প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছিল কয়েকশো মানুষ।
এই দৌড় প্রতিযোগিতা পাঞ্জাবের লোকসংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এই খেলার সাক্ষী থাকতে ভিড় করেন বহু মানুষ। ষাঁড়গুলিকে একটি কাঠের কাঠামো দিয়ে বাঁধা হয় এবং সেগুলির পিছনে একটি পাটাতনের উপর চড়ে বসেন দৌড়বিদ। বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় তীব্র গতিতে ছুটে চলা, যা দর্শকদের মধ্যে উন্মাদনা আরও বাড়িয়ে তোলে।
এই প্রতিযোগিতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্থানীয় অর্থনীতির চাকাও। স্থানীয় বিক্রেতারা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেন, যেখানে পাওয়া যায় নানা ধরনের খাবার ও উৎসবের অনুষঙ্গ। কেউ বিক্রি করেন রঙিন ফিতা, কেউবা গরম তেলে ভাজা জিলেপি। এই আয়োজন গ্রামীণ অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।
মাললের এই ষাঁড় দৌড় কেবল একটি খেলা নয়, এটি গ্রামবাসীদের কাছে গর্বের বিষয়। স্থানীয় কৃষক এবং জমির মালিকরা এই প্রতিযোগিতার জন্য সারা বছর ধরে ষাঁড়দের লালন-পালন করেন। বিজয়ী ষাঁড়ের মালিক হন সম্মানিত, যা তাঁদের সমাজে বিশেষ স্থান দেয়।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন এসে ভিড় করেন। এই বছর একশোর বেশি ষাঁড় এই দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন স্থানীয় কৃষক মহম্মদ রমজান। তিনি বলেন, “আমার ষাঁড় পঞ্চম স্থান অধিকার করেছে, এতেই আমি খুব খুশি। আরো ৯৫টি ষাঁড়কে পেছনে ফেলে দিয়েছে আমার ষাঁড়।”
ঐতিহ্যপূর্ণ এই ষাঁড় দৌড় গ্রামবাংলার মানুষের কাছে এক আনন্দ উৎসব। বিজয়ীদের উল্লাস, আকাশে উড়তে থাকা মুদ্রা – সব কিছুই যেন উৎসবের মেজাজ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। এটি শুধু একটি খেলা নয়, বরং পাঞ্জাবের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস