বিড়াল ক্যাফে: বিড়ালপ্রেমীদের আশ্রয় নাকি বিড়ালের অধিকারের লঙ্ঘন?
আধুনিক বিশ্বে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে, নতুন এক ধরনের ক্যাফের ধারণা জনপ্রিয়তা লাভ করছে – বিড়াল ক্যাফে। এই ক্যাফেগুলোতে কফি ও স্ন্যাকসের সঙ্গে বিড়ালদের সান্নিধ্য উপভোগ করার সুযোগ থাকে। কিন্তু এই ধারণাটি নিয়ে বিতর্কও বাড়ছে।
পশু অধিকার এবং কল্যাণের সংগঠনগুলো এই ধরনের ক্যাফেগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছে। তাদের মতে, বিড়ালদের জন্য এই ধরনের পরিবেশে বসবাস করা বেশ কষ্টকর এবং অনেক ক্ষেত্রে তাদের অধিকার লঙ্ঘিত হয়।
যুক্তরাজ্যে, দ্য রয়্যাল সোসাইটি ফর দ্য প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু অ্যানিম্যালস (RSPCA) এবং ক্যাটস প্রোটেকশন-এর মতো সংগঠনগুলো বিড়াল ক্যাফেগুলোর বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে। তাদের মূল অভিযোগ হলো, বিড়ালদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা প্রায় অসম্ভব।
একটি আবদ্ধ স্থানে, যেখানে অনেক বিড়াল এবং মানুষের আনাগোনা থাকে, সেখানে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। যদিও কিছু ক্যাফে মালিক দাবি করেন যে, তারা বিড়ালদের আশ্রয় দেয় এবং তাদের ভালো দেখাশোনা করে, সংগঠনগুলোর আশঙ্কা, মুনাফার লোভে অনেক সময় বিড়ালদের কল্যাণের দিকটি উপেক্ষিত হয়।
তবে, বিড়াল ক্যাফের ধারণাটি একেবারে নতুন নয়। তাইওয়ানের তাইপে শহরে ১৯৯৮ সালে প্রথম বিড়াল ক্যাফে চালু হয়েছিল। এরপর জাপানে এর জনপ্রিয়তা বাড়ে, বিশেষ করে ছোট অ্যাপার্টমেন্টে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে, যেখানে পোষা প্রাণী রাখা কঠিন ছিল।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, এই ধারণাটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে।
যুক্তরাজ্যে বর্তমানে ৩২টির বেশি লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিড়াল ক্যাফে রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে অনেক ক্যাফে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে বলে ধারণা করা হয়।
এই পরিস্থিতিতে, RSPCA এবং ক্যাটস প্রোটেশন স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে নতুন লাইসেন্স প্রদান না করার এবং বিদ্যমান লাইসেন্সগুলো নবায়ন না করার আহ্বান জানিয়েছে।
তবে, বিড়াল ক্যাফেগুলোর মালিকরা এই সমালোচনার সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তাদের মতে, অনেক ক্ষেত্রে বিড়াল ক্যাফেগুলো আশ্রয়কেন্দ্রের মতো কাজ করে, যেখানে বিড়ালদের নতুন পরিবার খুঁজে পেতে সহায়তা করা হয়।
কিছু ক্যাফে মালিক জানান, তারা RSPCA এবং ক্যাটস প্রোটেকশন যাদের আশ্রয় দিতে রাজি হয় না, সেইসব বিড়ালদেরও আশ্রয় দেয়। বিড়ালদের খাঁচাবন্দী করে রাখার পরিবর্তে, ক্যাফেতে তাদের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি করা হয়।
অন্যদিকে, পশু আচরণবিদ এবং প্রাণীপ্রেমীরাও এই বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত। কেউ কেউ মনে করেন, বিড়ালদের জন্য ক্যাফেগুলো আদর্শ স্থান নয়, কারণ সেখানে তাদের সামাজিক চাহিদাগুলো পূরণ করা কঠিন।
আবার অনেকে মনে করেন, কিছু ক্যাফে ভালো কাজ করছে এবং বিড়ালদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বাংলাদেশে বিড়ালদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন। এখানে অনেক বিড়ালকে অবহেলিত অবস্থায় দেখা যায়। যদিও পোষা বিড়ালের সংখ্যা বাড়ছে, তাদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ এবং চিকিৎসা সেবার অভাব এখনো একটি বড় সমস্যা।
বিড়াল ক্যাফের ধারণাটি বাংলাদেশে এখনো পরিচিত না হলেও, প্রাণী অধিকার এবং কল্যাণের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
বিড়াল ক্যাফেগুলো বিড়ালপ্রেমীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হতে পারে, কিন্তু বিড়ালদের কল্যাণের বিষয়টি সবার আগে বিবেচনা করতে হবে। ক্যাফে পরিচালনার ক্ষেত্রে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, বিড়ালদের পর্যাপ্ত স্বাধীনতা দেওয়া এবং তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখা অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: নিজস্ব