বন্ধ্যত্বের বিরুদ্ধে লড়াই: বন্ধু ও সহকর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার উপায়।
বর্তমানে, অনেক দম্পতিই সন্তান ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। চিকিৎসা বিজ্ঞান আমাদের জন্য বন্ধ্যাত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে এসেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ বা আইভিএফ। যুক্তরাজ্যে প্রতি সাত দম্পতির মধ্যে একজনের এই ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৩ লক্ষেরও বেশি আইভিএফ চক্র সম্পন্ন হয়েছে।
এই বিষয়টি মাথায় রেখে, আমাদের চারপাশে এমন অনেক বন্ধু বা সহকর্মী থাকতে পারেন, যারা হয়তো এই কঠিন পথটি পাড়ি দিচ্ছেন। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং সঠিক শব্দ ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এই সময়ে তাদের মানসিক অবস্থা খুবই সংবেদনশীল থাকে। সামান্য ভুল বোঝাবুঝি বা অসচেতনতায় তাদের কষ্ট আরও বেড়ে যেতে পারে।
আসুন, জেনে নিই আইভিএফ-এর সময় বন্ধুদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিত এবং কোন বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া ভালো:
যেসব কথা বলা উচিত নয়:
- ১. “অ্যালকোহল পান করছ না?”
- আইভিএফ-এর সময় অনেককে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো অ্যালকোহল পরিহার করা। তাই, এই ধরনের প্রশ্ন করা তাদের মন খারাপ করতে পারে।
- ২. “সন্তান না হলে, কি হবে? সন্তান নেওয়া তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়।”
- প্রত্যেক দম্পতির কাছেই সন্তান ধারণের আকাঙ্ক্ষা স্বাভাবিক। তাই, এই ধরনের কথা তাদের হতাশ করতে পারে।
- ৩. “কেন শুধু শুধু এত খরচ করছ? বরং, দত্তক নাও।”
- দত্তক নেওয়া একটি মহৎ কাজ, তবে প্রত্যেক দম্পতির পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। আইভিএফ-এর মতো একটি জটিল প্রক্রিয়া বেছে নেওয়ার পেছনে নিশ্চয়ই তাদের নিজস্ব কারণ রয়েছে। তাই, এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা উচিত নয়।
- ৪. “সমস্যাটা কি তোমার, নাকি তোমার সঙ্গীর?”
- এই ধরনের প্রশ্ন করা অত্যন্ত অনুচিত।
- ৫. “বাহ! দারুণ খবর! খুব ভালো লাগছে।”
- তাদের ভালো লাগতে পারে, তবে তাদের এই যাত্রা অনেক ক্ষেত্রেই কঠিন হতে পারে। তাই, তাদের অনুভূতিকে সম্মান জানানো উচিত।
- ৬. “আরে, কোনো সমস্যা নেই! ছুটি কাটাতে গেলেই তো সব ঠিক হয়ে যাবে।”
- চিকিৎসার মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করা দম্পতিদের জন্য এই ধরনের কথা বলা ভালো নয়।
- ৭. “ডাক্তার কি অনলাইনে খুঁজেছেন? দেখতে কেমন? কোন দেশের?”
- আইভিএফ-এর মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার সময় অনেক দম্পতি সাহায্যকারীর (donor) সহায়তা নেন। সাহায্যকারীর চেহারা বা তাঁর দেশের বিষয়ে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা খুবই অসংবেদনশীল।
যেসব কথা বলা যেতে পারে:
- ১. “আমি দুঃখিত যে তোমাকে এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।”
- যদি আপনার কোনো বন্ধু বা পরিচিত এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করুন। তাদের প্রতি আপনার সমর্থন রয়েছে, তা বুঝিয়ে বলুন।
- ২. “তোমার যা প্রয়োজন, আমি আছি।”
- তাদের কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হলে, পাশে থাকার আশ্বাস দিন।
- ৩. “আমি এ বিষয়ে খুব বেশি কিছু জানি না।”
- যদি আপনি বিষয়টি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত না হন, তবে তা অকপটে স্বীকার করুন। তবে, তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে ভুলবেন না।
- ৪. “আমি বিলটা দিচ্ছি।”
- আইভিএফ-এর চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল। কোনো বন্ধুর চিকিৎসার সময় বিল পরিশোধের মতো ছোটখাটো সাহায্য তাদের প্রতি আপনার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করতে পারে।
- ৫. “কিছু বলার প্রয়োজন নেই।”
- কখনো কখনো, কোনো কথা না বলেও তাদের পাশে থাকা যায়। তাদের জন্য একটি ছোট্ট উপহার অথবা একটি কার্ডের মাধ্যমেও আপনার সমর্থন জানানো যেতে পারে।
- ৬. “আমার পরিচিত একজনও এই পথে হাঁটছে, চাইলে কথা বলতে পারো।”
- যদি আপনার পরিচিত কেউ একই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যান, তবে তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে পারেন।
বন্ধ্যাত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করা দম্পতিদের প্রতি আমাদের সকলেরই সহানুভূতিশীল হওয়া উচিত। তাদের পাশে থাকা, তাদের কথা শোনা এবং তাদের অনুভূতিকে সম্মান জানানো—এগুলোই হলো আসল কথা।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান