শিরোনাম: প্রযুক্তি আর ফ্যাশনের মেলবন্ধন: পোশাকের জগতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছেন মার্কিন প্রকৌশলী ক্রিস্টিনা আর্নস্ট
বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তির অগ্রগতি ফ্যাশন জগৎকে দিয়েছে এক নতুন রূপ। পোশাকের নকশার সঙ্গে প্রযুক্তির মেলবন্ধন ঘটিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গুগলের সফটওয়্যার প্রকৌশলী ক্রিস্টিনা আর্নস্ট।
শিকাগোতে বসবাসকারী এই তরুণী “ফ্যাশনেয়ারিং” ধারণা নিয়ে কাজ করছেন, যেখানে পোশাকের ডিজাইন, প্রোগ্রামিং এবং রোবোটিক্সের এক অসাধারণ মিশ্রণ দেখা যায়। তার তৈরি পোশাকগুলো শুধু পরিধানের জন্যই নয়, বরং প্রযুক্তির নান্দনিক ব্যবহারেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
আর্নস্টের তৈরি করা পোশাকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঘুরতে থাকা একটি গাউন, যা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম। এছাড়াও, মোমবাতির আলোয় আলোকিত একটি কোমরবন্ধ এবং কাঁচের মত দেখতে প্যানেলযুক্ত একটি পোশাক তৈরি করেছেন তিনি, যা রাতের বেলা জানালায় আলোর মতো ঝলমল করে।
আর্নস্ট তার কাজের মাধ্যমে বিশেষভাবে তরুণীদের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (STEM) এর প্রতি আগ্রহী করে তুলতে চান। তার মতে, ফ্যাশন, শিল্পকলা এবং প্রযুক্তির মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করা যেতে পারে এবং এর মাধ্যমে তরুণীরা নতুন কিছু করার অনুপ্রেরণা পেতে পারে।
এই লক্ষ্যে তিনি “শি বিল্ডস রোবটস” নামে একটি ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনা করেন, যেখানে তিনি তার বিভিন্ন প্রকল্পের ভিডিও ও টিউটোরিয়াল আপলোড করেন।
আর্নস্টের “ফ্যাশনেয়ারিং” ধারণা অনেকের কাছেই নতুন। তার তৈরি পোশাকগুলির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি হলো “মেডুসা” পোশাক। এই পোশাকে ছিল রোবোটিক সাপ, যা এআই (AI) প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষের চোখের দিকে তাকাতে পারতো।
এছাড়াও, “রাঁধুনি ইঁদুর” (Remy) -এর আদলে তৈরি একটি হেয়ারব্যান্ড তৈরি করে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। এই হেয়ারব্যান্ডটি তার চুলের সাথে ওঠানামা করত, যা দর্শকদের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছিল।
আর্নস্ট মনে করেন, প্রযুক্তি খুবই “জাদুকরী”। তিনি চান, তার ডিজাইনগুলি প্রযুক্তির চিরাচরিত ধারণাকে ভেঙে দিতে এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে প্রকৌশলবিদ্যার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে।
তার মতে, প্রযুক্তি এবং ফ্যাশন—দুটোই একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া।
আর্নস্টের এই উদ্ভাবনী চিন্তা ফ্যাশন জগতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। যদিও তিনি ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সরাসরি প্রবেশের পরিকল্পনা করছেন না, তবে তার কাজ ইতিমধ্যেই অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজাইন করা বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে আর্নস্ট দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছেন কিভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ধারণা ফ্যাশনের সাথে যুক্ত করা যায়। তিনি মনে করেন, ফ্যাশন এবং বিজ্ঞানের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর।
আর্নস্টের এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করে যে, প্রযুক্তি এবং ফ্যাশন—দুটোই সৃজনশীলতার গুরুত্বপূর্ণ দিক। তার কাজ তরুণ প্রজন্মের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, যেখানে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্পকলা এবং ফ্যাশন একসঙ্গে মিশে নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন