ব্রিটিশ দম্পতি ফ্রেড ও রোজ ওয়েস্ট-এর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কাহিনী: এক ভয়াবহতার চিত্র।
ব্রিটিশ ইতিহাসে নৃশংসতম অপরাধ সংঘটিত করা দম্পতিদের মধ্যে ফ্রেড এবং রোজ ওয়েস্ট অন্যতম। তাদের বীভৎস কার্যকলাপের কথা আজও সারা বিশ্বে মানুষের মনে গভীর দাগ কাটে।
এক দশকের বেশি সময় ধরে তারা অন্তত ১০ জন তরুণী ও কিশোরীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে, যাদের মধ্যে তাদের নিজ সন্তানও ছিল। ইংল্যান্ডের গ্লুচেস্টার শহরে তাদের বাড়িতে, ২৮ ক্রমওয়েল স্ট্রিটে, তারা এই ভয়ংকর অপরাধগুলো সংঘটিত করে আসছিল, যা বাইরের জগৎ থেকে সম্পূর্ণ গোপন ছিল।
সময় গড়ানোর সাথে সাথে তাদের শিকারের সংখ্যা বাড়ে, কিন্তু অবশেষে তাদের কুকীর্তি প্রকাশ হয়ে পরে। সম্প্রতি, নেটফ্লিক্সে মুক্তিপ্রাপ্ত “ফ্রেড এবং রোজ ওয়েস্ট: আ ব্রিটিশ হরর স্টোরি” সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো আবারও সামনে নিয়ে এসেছে।
ফ্রেড ওয়েস্টের জন্ম হয় ১৯৪১ সালে। রোজের সাথে তার পরিচয় হয় যখন রোজ একটি বাস স্টপে অপেক্ষা করছিলেন। তখন রোজের বয়স ছিল ১৫ বছর, আর ফ্রেডের ২৭।
এরপর রোজ ফ্রেডের সন্তানদের দেখাশোনা করার কাজ নেয় এবং একসময় তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ১৯৭২ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
ফ্রেডের অপরাধের শুরুটা রোজের সাথে পরিচিত হওয়ার আগে থেকেই। জানা যায়, তিনি এর আগে আরও কিছু অপরাধের সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু রোজের সাথে মিলিত হওয়ার পর তার অপরাধের মাত্রা আরও বাড়তে থাকে।
তারা মিলেমিশে ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্য কাজগুলো করতে শুরু করে।
ফ্রেড ও রোজের শিকার হওয়া নারীদের মধ্যে অনেকে ছিলেন খুবই অল্প বয়সী। তারা নারীদের প্রথমে তাদের বাড়িতে কাজের প্রস্তাব দিত, এরপর তাদের ওপর শারীরিক ও যৌন নির্যাতন চালাত এবং অবশেষে খুন করত।
১৯৭৩ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে লিন্ডা গফ, ক্যারোল অ্যান কুপার, লুসি পারটিংটন, থেরেসা সিজেন্টহেলার, শার্লি হাববার্ড, জুয়ানিটা মট, শার্লি অ্যান রবিনসন এবং অ্যালিসন চেম্বার্সের মতো নারীদের হত্যা করা হয়।
শুধু নারীই নয়, ফ্রেড ও রোজ তাদের নিজেদের সন্তানদেরও নিগ্রহ করতে দ্বিধা করেনি। তাদের সন্তানদের মধ্যে কয়েকজন ছিল তাদের যৌন নির্যাতনের শিকার।
তাদের নয়টি সন্তানের মধ্যে তারা তাদের মেয়ে চারমেইন এবং হিদারকে হত্যা করে।
ফ্রেড ও রোজের অত্যাচারের শিকার হওয়া তাদের সন্তানরা একাধিকবার হাসপাতালে গিয়েছিল। জানা যায়, ১৯৭২ থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে ৩১ বার তাদের হাসপাতালে নিতে হয়েছিল।
কিন্তু কোনোবারই সমাজসেবা বিভাগের সহায়তা নেওয়া হয়নি।
তাদের মেয়ে হিদারকে হত্যার ঘটনাটি ছিল সবচেয়ে মর্মান্তিক। হিদার তার বন্ধুদের কাছে বাবা-মায়ের অত্যাচারের কথা জানালে, তারা তাকে হত্যা করে বাড়ির পেছনের বাগানে পুঁতে রাখে।
হিদারকে হত্যার পর, ফ্রেড তার আরেক মেয়ে লুইজের ওপর অত্যাচার শুরু করে। লুইজ ঘটনাটি তার এক বন্ধুকে জানালে, সেই বন্ধুর মা পুলিশের কাছে বেনামে খবর দেন।
এরপর তদন্ত শুরু হয় এবং ফ্রেড ও রোজকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তদন্তের সময় জানা যায়, তাদের আরও অনেক ভিকটিম ছিল এবং তাদের নৃশংসতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
১৯৯৪ সালে ফ্রেড ও রোজকে ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালতে বিচার শুরুর আগেই, ১৯৯৫ সালের ১লা জানুয়ারি, ফ্রেড ওয়েস্ট আত্মহত্যা করেন। এরপর রোজ ওয়েস্টের বিচার শুরু হয়।
বিচারে রোজ ওয়েস্টকে ১০টি খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি একটি কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন।
এই ঘটনার ভয়াবহতা আজও মানুষকে নাড়া দেয়। সমাজের দুর্বল এবং অসহায় মানুষদের প্রতি আরও বেশি মানবিক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা এই ঘটনা প্রমাণ করে।
তথ্য সূত্র: নেটফ্লিক্স এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।