পুরুষদের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রোস্টেট স্ক্রিনিংয়ের গুরুত্ব
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ার পর প্রোস্টেট স্ক্রিনিং নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রোস্টেট ক্যান্সার শনাক্তকরণে এই স্ক্রিনিং কতটা জরুরি, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে।
আমাদের দেশের পুরুষদের মধ্যেও প্রোস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দরকার।
প্রোস্টেট কী? প্রোস্টেট হলো পুরুষদের প্রজননতন্ত্রের একটি অংশ। এটি মূত্রাশয়ের নিচে থাকে এবং বীর্য তৈরিতে সহায়তা করে। প্রোস্টেট গ্রন্থিতে ক্যান্সার হলে তাকে প্রোস্টেট ক্যান্সার বলা হয়।
প্রোস্টেট ক্যান্সার নির্ণয়ের প্রধান উপায় হলো প্রোস্টেট-স্পেসিফিক অ্যান্টিজেন (পিএসএ) পরীক্ষা। পিএসএ হলো প্রোস্টেট গ্রন্থি থেকে তৈরি হওয়া একটি প্রোটিন। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে শরীরে এর মাত্রা মাপা হয়। পিএসএ-এর মাত্রা বেড়ে গেলে তা প্রোস্টেট ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
তবে, পিএসএ-এর উচ্চ মাত্রা সবসময় ক্যান্সার নির্দেশ করে না। কিছু ক্ষেত্রে, যেমন প্রোস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ, বয়সের কারণে অথবা অন্য কোনো স্বাস্থ্যগত কারণেও পিএসএ-এর মাত্রা বাড়তে পারে। তাই, পিএসএ পরীক্ষার ফল নিয়ে দ্রুত আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
চিকিৎসকরা সাধারণত বছরে একবার পিএসএ পরীক্ষার পরামর্শ দেন। পিএসএ-এর মাত্রা বেশি পাওয়া গেলে, ডাক্তাররা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার আছে কিনা তা নিশ্চিত করেন। এর মধ্যে প্রোস্টেট বায়োপসি অন্যতম। বায়োপসির মাধ্যমে প্রোস্টেট থেকে টিস্যু নিয়ে তা পরীক্ষা করা হয়।
কারা এই স্ক্রিনিং করাবেন? সাধারণত, যাদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি, তাদের স্ক্রিনিং করানো উচিত। যেমন, যাদের পরিবারের কোনো সদস্যের (বাবা, ভাই) প্রোস্টেট ক্যান্সার আছে, তাদের ঝুঁকি বেশি থাকে। এছাড়া, যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি, তাদেরও স্ক্রিনিং করানো উচিত। তবে, ঝুঁকি এবং বয়স ভেদে এই স্ক্রিনিংয়ের সময়সীমা ভিন্ন হতে পারে। তাই, আপনার ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
আমাদের দেশে প্রোস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা এখনো কম। অনেক পুরুষ এই বিষয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। তবে, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এর সফল চিকিৎসা সম্ভব। তাই, প্রোস্টেট ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখা জরুরি।
যদি আপনার প্রস্রাবের সমস্যা হয়, যেমন—বারবার প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া, অথবা প্রস্রাবের বেগ ধরে রাখতে সমস্যা হওয়া—তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। এছাড়া, আপনার পরিবারের কারো প্রোস্টেট ক্যান্সার হয়ে থাকলে, অবশ্যই স্ক্রিনিং করান।
মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং সচেতনতাই পারে আপনাকে সুস্থ রাখতে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন