আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কমেডিয়ান পল রুবেন্স, যিনি ‘পি-উই হারমান’ চরিত্র দিয়ে সারা বিশ্বে পরিচিত, তাঁর জীবনের অজানা দিকগুলো নিয়ে নির্মিত একটি তথ্যচিত্র মুক্তি পেতে যাচ্ছে। ‘পি-উই অ্যাজ হিমসেলফ’ শিরোনামের এই তথ্যচিত্রে অভিনেতা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, ক্যারিয়ার এবং বিতর্কিত কিছু ঘটনা নিয়ে মুখ খুলেছেন।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া এই তথ্যচিত্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
পল রুবেন্স, যিনি তাঁর হাস্যরসাত্মক অভিনয়ের জন্য সুপরিচিত ছিলেন, এই তথ্যচিত্রে তাঁর জীবনের গোপন কথাগুলো সকলের সামনে এনেছেন। বিশেষ করে, তাঁর যৌনজীবন সম্পর্কে এতদিন যে তথ্যগুলো অজানা ছিল, সেগুলোর ওপর আলোকপাত করা হয়েছে।
এই তথ্যচিত্রে তিনি প্রথমবারের মতো নিজেকে একজন সমকামী হিসেবে ঘোষণা করেন।
তথ্যচিত্রে রুবেন্স তাঁর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। কলেজ জীবনের পরে তিনি ‘গাই’ নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন।
তাঁরা একসঙ্গে থাকতেন এবং একটি বিড়ালও পুষতেন। রুবেন্সের মতে, এই সম্পর্কটি তাঁর কৌতুক রচনার ক্ষেত্রে অনেক বড় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি ঘরটিতে তাকালাম এবং একজনকে দেখে তৎক্ষণাৎ ভালোবেসে ফেললাম। আমি অনুভব করলাম, ‘এই তো সেই মানুষটি’। ”
তবে ক্যারিয়ারের কারণে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে আড়ালে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন।
কারণ, সেই সময়ে প্রকাশ্যে তাঁর সমকামী পরিচয় জানালে পেশাগত জীবনে সমস্যা হতে পারতো। তিনি বলেন, “আমি যতটা খোলাখুলি হতে পারতাম, হয়েছিলাম। কিন্তু তারপর আবার চুপ হয়ে যাই।
আমার ক্যারিয়ার হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত হতো, যদি আমি প্রকাশ্যে আসতাম। তাই অনেক বছর ধরে আমি বিষয়টি গোপন রেখেছিলাম। ”
এছাড়াও, তথ্যচিত্রে রুবেন্স তাঁর শিল্পী জীবনের শুরুর দিকের কথা বলেছেন।
তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ দ্য আর্টস-এ থাকাকালীন বিভিন্ন ধরনের শিল্পচর্চা করতেন। সেখানে তিনি নিজেকে আবিষ্কার করার সুযোগ পান।
তাঁর মতে, পারফর্মেন্স আর্ট ছিল তাঁর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “ভোর রাতের বেলা ডর্মে বসে, নিজেকে অন্যভাবে উপস্থাপন করা হতো।
হয়তো তখন আপনি আমাকে একজন ‘ড্রাগ কুইন’ হিসেবেও ভাবতে পারতেন। এবং হয়তো আপনার ধারণা সঠিকও ছিল। ”
১৯৯১ সালে একটি প্রাপ্তবয়স্কদের সিনেমাহলে ‘অশোভন আচরণের’ অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন রুবেন্স। এই ঘটনাটি তাঁর জীবনে ‘একটি বড় অধ্যায়’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
এই ঘটনার পর তাঁর সম্পর্কে অনেকে খারাপ মন্তব্য করেছিলেন।
পরবর্তীতে, ২০০২ সালে তাঁর বাড়ি থেকে কিছু শিল্পকর্ম জব্দ করা হয়, যেগুলোর মধ্যে কিছুকে শিশু পর্নোগ্রাফির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।
পরিচালক ম্যাট উলফ জানিয়েছেন, রুবেন্স তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন, যা তিনি গোপন রেখেছিলেন।
মৃত্যুর মাত্র এক সপ্তাহ আগে তাঁদের একটি চূড়ান্ত সাক্ষাত্কার নেওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তার আগেই রুবেন্সের জীবনাবসান হয়।
মৃত্যুর আগে রুবেন্স তাঁর শেষ বার্তায় বলেন, “আমি চেয়েছিলাম মানুষ দেখুক, আমি আসলে কেমন এবং ‘আমি একজন শিশু যৌন নির্যাতনকারী’—এই অপবাদ কতটা কষ্টের ছিল।
আমি চেয়েছিলাম, সবাই বুঝুক, আমার পুরো ক্যারিয়ার, আমার কাজ, সবকিছু ভালোবাসার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে।”
তথ্য সূত্র: পিপল