ক্যালিফোর্নিয়ার পালমডেলের একটি মর্মান্তিক ঘটনা, যা আজও মানুষের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। ২০১৩ সালের মে মাসে, আট বছর বয়সী গ্যাব্রিয়েল ফার্নান্দেজ নামের এক শিশুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
তার মা, পার্ল ফার্নান্দেজ এবং মায়ের প্রেমিক ইসাউরো আগুইরের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়ে শিশুটি মারা যায়। এই ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে তাদের দু’জনের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয়, ২০১৩ সালের ২২শে মে তারিখে, যখন পার্ল ৯১১ নম্বরে ফোন করে জানান যে তার ছেলে শ্বাস নিচ্ছে না। জরুরি বিভাগের কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান।
তারা গ্যাব্রিয়েলের শরীরে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান, যার মধ্যে ছিল মাথার খুলিতে ফাটল, ভাঙা পাঁজর এবং শরীরে গুলির আঘাতের চিহ্ন। ঘটনার কয়েকদিন পর, ২৪শে মে, ২০১৩, গ্যাব্রিয়েলকে লাইফ সাপোর্ট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় এবং এর পরেই মা ও তার প্রেমিককে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার শুনানিতে গ্যাব্রিয়েলের পরিবারের সদস্যরা, বিশেষ করে তার ভাইবোন ভার্জিনিয়া ও ইজেকিয়েল, তাদের ভাইয়ের উপর হওয়া ভয়ানক নির্যাতনের কথা বর্ণনা করেন। তারা জানান, গ্যাব্রিয়েলকে মারধর করা হতো, খাবার খেতে দেওয়া হতো না এবং এমনকি একটি ছোট আলমারিতে বন্দী করে রাখা হতো।
গ্যাব্রিয়েলের উপর নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেশি ছিল যে, তা শুনলে যে কারো গা শিউরে উঠবে।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন সমাজকর্মীরাও। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, গ্যাব্রিয়েলের প্রতি অবহেলা করার। তারা গ্যাব্রিয়েলের উপর হওয়া নির্যাতনের প্রমাণগুলো উপেক্ষা করেছিলেন।
যদিও পরে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো খারিজ হয়ে যায়।
আদালতে বিচারের পর, ২০১৭ সালের নভেম্বরে, ইসাউরো আগুইরেকে প্রথম-ডিগ্রি হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে, পার্ল ফার্নান্দেজ ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দোষ স্বীকার করেন এবং জুন মাসে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়, প্যারোলের কোনো সুযোগ ছাড়াই।
এই মামলার রায় ঘোষণার সময়, লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি জ্যাকি লেসি বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, কতটা ভয়ংকর হতে পারে একজন মানুষের ভেতরের খারাপ চিন্তাগুলো। গ্যাব্রিয়েলের প্রতি হওয়া নির্যাতন এবং হত্যার ঘটনা আমাদের মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে এবং এই জঘন্য কাজের জন্য আসামিদের বাকি জীবন জেলেই কাটাতে হবে।”
বর্তমানে, পার্ল ফার্নান্দেজ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি মহিলা কারাগারে বন্দী জীবন কাটাচ্ছেন। তিনি প্যারোলের জন্য আবেদন করেছিলেন, কিন্তু আদালত তা খারিজ করে দেন।
অন্যদিকে, ইসাউরো আগুইরেকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও, ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম মৃত্যুদণ্ডের উপর স্থগিতাদেশ ঘোষণা করেছেন, ফলে তার মুক্তির সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত।
গ্যাব্রিয়েল ফার্নান্দেজের মর্মান্তিক মৃত্যু এবং তার মায়ের নিষ্ঠুরতা আজও মানুষকে নাড়া দেয়। এই ঘটনা শিশুদের নিরাপত্তা এবং সমাজের দুর্বল অংশগুলোর প্রতি আমাদের দায়িত্বের কথা মনে করিয়ে দেয়।
তথ্য সূত্র: পিপল