পুরুষদের বন্ধুত্ব নিয়ে নতুন ছবি ‘ফ্রেন্ডশিপ’ -এর আলোচনা: এক হতাশাজনক বাস্তবতার চিত্র।
বন্ধুত্ব – এই শব্দটি সম্পর্কের এক গভীরতা বহন করে। ছেলে হোক কিংবা মেয়ে, বন্ধুত্বের গুরুত্ব সবার কাছেই অনেক।
তবে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া একটি ছবি, ‘ফ্রেন্ডশিপ’, পুরুষদের বন্ধুত্বের এক ভিন্ন চিত্র তুলে ধরেছে। ছবিতে অভিনয় করেছেন টিম রবিনসন এবং পল রুড।
লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটির প্রদর্শনী শেষে পুরুষদের মধ্যে বন্ধুত্বের ধারণা নিয়ে আলোচনা হয়, যা বর্তমান সমাজের বাস্তবতাকে যেন নতুন করে সামনে নিয়ে আসে।
ছবিটির গল্প মধ্যবয়সী ক্রেইগ নামের এক ব্যক্তির জীবনকে কেন্দ্র করে, যিনি দিনের পর দিন একা কাটান। এক সময় প্রতিবেশী অস্টিনের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়, কিন্তু সেই সম্পর্ক বেশি দিন টেকে না।
ক্রেইগের সামাজিক দুর্বলতা এবং সম্পর্কের জটিলতা ছবিটিকে আরও গভীরতা দেয়। বন্ধুত্ব ভেঙ্গে যাওয়ার পর ক্রেইগ যেন একাকীত্বে আরও বেশি আক্রান্ত হন।
বন্ধুদের থেকে দূরে থাকার কষ্ট তাকে এক নতুন পথে নিয়ে যায়।
আলোচনায় অংশ নেওয়া অনেকে, বিশেষ করে ত্রিশোর্ধ্ব পুরুষরা, তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানান। তাদের মতে, ছবিতে পুরুষদের বন্ধুত্বের যে চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা যেন তাদের জীবনেরই প্রতিচ্ছবি।
বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানোর আকাঙ্ক্ষা থাকলেও, অনেক সময় তা কঠিন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে, পরিণত বয়সে নতুন বন্ধু তৈরি করা বেশ চ্যালেঞ্জিং।
এই প্রসঙ্গে উঠে আসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় – পুরুষদের মধ্যে বন্ধুত্বের অভাব। ১৯৯০ সালে যেখানে প্রতি ১০০ জন পুরুষের মধ্যে ৫৫ জনের অন্তত ৬ জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, সেখানে ২০২১ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৭ জনে।
অর্থাৎ, বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে পুরুষদের মধ্যে এক ধরনের ‘ঘাটতি’ দেখা যাচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষরা আবেগ প্রকাশে নারীদের চেয়ে খানিকটা পিছিয়ে থাকে, যা গভীর বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।
আলোচনায় আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়, তা হলো পুরুষ এবং নারীর বন্ধুত্বের ধরন আলাদা। নারীরা যেখানে তাদের বন্ধুদের সঙ্গে নিজেদের অনুভূতি ভাগ করে নেন, সেখানে পুরুষদের মধ্যে ঠাট্টা-তামাশা, হাসি-ঠাট্টার মাধ্যমে সম্পর্কের গভীরতা তৈরি হয়।
ছবিটি দেখতে আসা ৩৫ বছর বয়সী এক নারী, এমিলি প্যান্ডো বলেন, “পুরুষদের জন্য ভালো বন্ধু তৈরি করা কঠিন। কারণ, তারা সবসময় ইতিবাচক বন্ধুত্বের সুযোগ পায় না।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বর্তমান প্রজন্মের ছেলেদের মধ্যে অনেকে সামাজিক সম্পর্ক থেকে দূরে থাকতে চায়। তাই, যারা এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বন্ধু তৈরি করতে পারে, তারা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য।”
তবে, সবার অভিজ্ঞতা যে এক রকম, তা নয়। কেউ কেউ ছবিটিকে বাস্তবতার কাছাকাছি মনে করলেও, অনেকের কাছেই এটি ছিল অতিরিক্ত এবং হতাশাজনক।
তাদের মতে, ছবিতে ক্রেইগের চরিত্রে মানসিক অস্থিরতার দিকটি বেশি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
সবশেষে, ‘ফ্রেন্ডশিপ’ ছবিটি যেন পুরুষদের বন্ধুত্বের জটিলতা এবং সমাজের এক কঠিন বাস্তবতাকে তুলে ধরে। ছবিটি একইসঙ্গে বন্ধুত্বের গুরুত্ব এবং তা টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয়তার কথা মনে করিয়ে দেয়।
বন্ধুত্বের এই সংকটপূর্ণ সময়ে, ছবিটির আলোচনা আমাদের সমাজের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উন্মোচন করে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান