ইরানি চলচ্চিত্রকার জাফর পানাহির কান চলচ্চিত্র উৎসবে জয়, শিল্পের স্বাধীনতা ও প্রতিরোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র জগতে অন্যতম সম্মানজনক আসর কান চলচ্চিত্র উৎসব। সম্প্রতি এই উৎসবে সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার ‘পাম ডি’অর’ জিতে নিয়েছেন ইরানের খ্যাতিমান চলচ্চিত্র পরিচালক জাফর পানাহি।
তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ইট ওয়াজ জাস্ট অ্যান অ্যাক্সিডেন্ট’-এর জন্য এই স্বীকৃতি। ইরানের শিল্পী ও চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য এই জয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ পানাহি দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর কাজের মাধ্যমে ইরানের সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন, যা প্রায়শই ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার কারণ হয়েছে।
জাফর পানাহি শুধু একজন চলচ্চিত্র পরিচালক নন, তিনি একজন শিল্পী যিনি সত্য বলার সাহস রাখেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে ইরানের মানুষের জীবন, তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা, এবং সমাজের নানা অসঙ্গতিগুলো অত্যন্ত সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলেন।
তাঁর সিনেমায় ইরানের সংস্কৃতি ও মানুষের মনস্তত্ত্বের গভীরতা ও সূক্ষ্মতা ফুটে ওঠে, যা টেলিভিশনের খবরে সবসময় পাওয়া যায় না। এর আগে, তাঁর প্রথম ছবি ‘দ্য হোয়াইট বেলুন’-এর জন্য কান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা ডেবিউ ফিল্মের পুরস্কার জিতেছিলেন তিনি।
রাজনৈতিক সমালোচনার কারণে পানাহিকে অনেকবার কারাবরণ করতে হয়েছে এবং তাঁর চলচ্চিত্র নির্মাণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ২০১০ সালে তাঁকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় এবং ২০ বছর ধরে চলচ্চিত্র নির্মাণ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা হয়।
এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও, তিনি থেমে যাননি। নানা কৌশল অবলম্বন করে, এমনকি গোপনে ছবি তৈরি করে, তিনি তাঁর কাজ চালিয়ে গেছেন। তাঁর চলচ্চিত্রগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে এবং ইরানের সংস্কৃতিকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করেছে।
কান চলচ্চিত্র উৎসবে পানাহির এই জয় শুধু তাঁর একার নয়, বরং শিল্পের স্বাধীনতা এবং মুক্ত চিন্তার পক্ষে এক বিরাট জয়। এটি প্রমাণ করে যে, প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও একজন শিল্পী তাঁর কাজ দিয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারেন।
তাঁর এই অর্জন বিশ্বজুড়ে শিল্পচর্চারত সকলের জন্য এক অনুপ্রেরণা।
এবারের কান চলচ্চিত্র উৎসবে অন্যান্য বিজয়ীদের মধ্যে ছিলেন জোয়াচিম ট্রিয়ার, যিনি ‘সেন্টমেন্টাল ভ্যালু’ সিনেমার জন্য গ্র্যান্ড প্রিক্স পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও, সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন ক্লিবের মেন্ডোকা ফিলহো, যিনি ‘দ্য সিক্রেট এজেন্ট’ নির্মাণ করেছেন।
আর সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন নাদিয়া মেলিটি, ‘দ্য লিটল সিস্টার’ সিনেমার জন্য।
জাফর পানাহির এই জয়, নিপীড়নের বিরুদ্ধে শিল্পীর জয়, সত্যের জয়, এবং মুক্তচিন্তার জয়। তাঁর কাজ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিল্প কখনোই দমিয়ে রাখা যায় না।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান