জাপানে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস নিয়ে সম্প্রতি জাপানে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে কিছু কল্পকাহিনী এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো গুজবের কারণে অনেক পর্যটক তাদের ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিল করছেন। এর ফলে দেশটির পর্যটন শিল্পে দেখা দিয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা।
ভূমিকম্পের কারণ ও পূর্বাভাস:
জাপান একটি ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ, যা “আগ্নেয়গিরির অগ্নিবলয়” এর উপর অবস্থিত। এখানে প্রায়ই ছোটখাটো ভূমিকম্প হয়। তবে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা সব সময়ই থাকে। সম্প্রতি কিছু ভবিষ্যৎ বক্তা এবং কমিক বইয়ের মাধ্যমে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে। এই পূর্বাভাসগুলো পর্যটকদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেছে।
আতঙ্কের কারণ:
১৯৯৯ সালে প্রকাশিত “দ্য ফিউচার আই স” নামক একটি জাপানি কমিক বইয়ে লেখক রিয়ো তাটসুকি ভবিষ্যতে একটি বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা উল্লেখ করেছিলেন। বইটিতে ২০১১ সালের মার্চ মাসে একটি বড় ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, যা পরবর্তীতে সত্যি হয়। এবার তিনি ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আরেকটি বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও, বিভিন্ন ভুয়া খবর এবং অনলাইনে ছড়ানো আতঙ্কের কারণে অনেক পর্যটক তাদের ভ্রমণ বাতিল করছেন।
পর্যটকদের প্রতিক্রিয়া:
এই উদ্বেগের কারণে চীন, হংকং, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো থেকে আসা পর্যটকদের মধ্যে ভ্রমণের পরিকল্পনা বাতিলের প্রবণতা বাড়ছে। অনেক পর্যটক তাদের ভ্রমণের তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছেন বা গন্তব্য পরিবর্তন করছেন। হংকংয়ের একটি ভ্রমণ সংস্থার মতে, ইস্টার হলিডেতে জাপানে বুকিং প্রায় অর্ধেক কমে গেছে এবং আগামী কয়েক মাসে এটি আরও কমতে পারে।
অন্যদিকে, কিছু পর্যটক এখনও তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ভ্রমণ করছেন। তারা মনে করেন, ভূমিকম্পের পূর্বাভাস সবসময় সঠিক হয় না এবং জাপান প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় যথেষ্ট সক্ষম।
সরকারের পদক্ষেপ:
জাপান সরকার জানিয়েছে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেওয়া এখনো সম্ভব নয়। দেশটির কর্মকর্তারা জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতামত:
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্প কখন হবে, তা সঠিকভাবে বলা প্রায় অসম্ভব। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিত্তিহীন খবরে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তারা পরামর্শ দিয়েছেন।
পর্যটকদের উপর প্রভাব:
পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়ায় জাপানের পর্যটন শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে, এখনো পর্যন্ত পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেনি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে:
বাংলাদেশের মানুষও প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে সচেতন। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা এবং ভূমিকম্পের মতো ঘটনার অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। তাই, জাপানের ভূমিকম্পের খবর আমাদের দেশের মানুষের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যসূত্র: সিএনএন