যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের একজন চিকিৎসক, যিনি রোগীদের ভুল রোগ নির্ণয় করে বীমা কোম্পানির কাছ থেকে ১১৮ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
ডা. জোর্জে জামোরা-কেজাদা নামের ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রোগীদের এমন কিছু রোগের কথা বলেছিলেন যা তাদের ছিল না। এর মাধ্যমে তিনি নিজের বিলাসবহুল জীবন যাপনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতেন।
ডা. জামোরা-কেজাদার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি রোগীদের আর্থ্রাইটিস (বাত) এর মতো গুরুতর রোগের ভুল নির্ণয় করতেন এবং তাদের চিকিৎসার নামে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতেন। এর মাধ্যমে তিনি রোগীদের স্বাস্থ্য বীমা থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতেন।
বিচারের সময় সরকারি আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ডা. জামোরা-কেজাদার এই প্রতারণার শিকার হওয়া রোগীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন, যাদের আসলে ঐ রোগগুলো ছিলই না। তাদের চিকিৎসার নামে ডাক্তার বিপুল পরিমাণ অর্থ বীমা কোম্পানি থেকে নিতেন।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে আদালত ডা. জামোরা-কেজাদাকে দোষী সাব্যস্ত করে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। এছাড়াও, তাকে প্রায় ২৮ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বেশি) সমমূল্যের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে ১৩টি বাড়ি, একটি ব্যক্তিগত জেট বিমান এবং একটি মাসেরাতি গ্রানটুরিসমো স্পোর্টস কারের মতো মূল্যবান সম্পত্তি।
ডা. জামোরা-কেজাদা রোগীদের ভুল রোগ নির্ণয় করে তাদের শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ করতেন। এর ফলে রোগীদের স্বাস্থ্যহানি ঘটত।
তিনি রোগীদের নিয়মিত তার ক্লিনিকে আসতে বাধ্য করতেন এবং চিকিৎসার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতেন। সরকারি আইনজীবীরা আরও জানান, ডা. জামোরা-কেজাদা রোগীদের স্বাস্থ্য বীমা থেকে অর্থ আদায়ের জন্য চিকিৎসার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করতেন।
ডা. জামোরা-কেজাদার এই জালিয়াতির পরিকল্পনাটি প্রায় ২০ বছর ধরে চলেছিল। তিনি এই সময়ের মধ্যে প্রায় ৩২৫ মিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ডা. জামোরা-কেজাদা টেক্সাস, অ্যারিজোনা এবং ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে চিকিৎসা পেশা পরিচালনার লাইসেন্সপ্রাপ্ত ছিলেন, তবে বর্তমানে তার সব লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
এই মামলার শুনানিতে রোগীদের দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে। অনেক রোগী জানিয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে মারাত্মক শারীরিক কষ্টের শিকার হয়েছেন এবং তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল।
রোগীদের অভিযোগ, ডা. জামোরা-কেজাদার ভুল চিকিৎসার কারণে তারা মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমনকি তাদের জীবনযাত্রা কার্যত একটি বৃদ্ধ মানুষের মতো হয়ে গিয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডা. জামোরা-কেজাদা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে, তাদের কষ্টের কারণ হয়ে এবং কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে নিজের বিলাসবহুল জীবন যাপন করেছেন।
এই ঘটনা স্বাস্থ্যখাতে নৈতিকতার অবক্ষয় এবং রোগীদের প্রতি চিকিৎসকদের দায়িত্বহীনতার একটি চরম উদাহরণ।
তথ্য সূত্র: পিপলস