১১ বছরের এক কিশোরীর শেখানো জীবন-পাঠ, যা দেখে হতবাক মা! সম্প্রতি এমনই এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা উঠে এসেছে সামাজিক মাধ্যমে, যা নেটিজেনদের মন জয় করে নিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, যেখানে রেইলি নামের এক কিশোরী তার মা, মাকেনজি কার্টিসকে অতীতের কিছু কষ্ট থেকে মুক্তি পাওয়ার এক অভিনব কৌশল শেখায়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, মা ও মেয়ে একটি লেকের ধারে পাথর কুড়োচ্ছেন। রেইলি তার মাকে অতীতের খারাপ অভিজ্ঞতাগুলো একটি একটি করে পাথরের আকারে জমা করতে বলে। প্রতিটি কষ্টের জন্য একটি করে পাথর।
পাথরগুলো স্তূপাকার হতে শুরু করলে একসময় তা নড়বড়ে হয়ে যায়। রেইলি তখন মাকে জানায়, “দেখো মা, কষ্টগুলো জমা হতে থাকলে তা কতটা কঠিন হয়ে যায়, তাই না? এগুলোকে সামলাতে অন্য কিছুর সাহায্য নিতে হয়।”
এরপর রেইলি পাথরগুলো ছুঁড়ে ফেলে দেয় লেকের পানিতে। মায়ের উদ্দেশ্যে সে বলে, “এগুলোর আর কোনো প্রয়োজন নেই। অতীতের খারাপ জিনিসগুলোর কথা ভেবে লাভ কি? চলো, এগুলোকে ভুলে যাই।”
বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে গিয়ে মাকেনজি জানান, মেয়ের এই কথায় তিনি প্রথমে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “আমার মনে হয়েছিল যেন রেইলি আমাকে বোঝাতে চাইছে, অতীতের খারাপ স্মৃতিগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া দরকার। সেগুলো নিয়ে আর বয়ে বেড়ানোর কোনো মানে নেই। সেগুলো লেকের পানিতে ফেলে দিয়ে আসা যাক, যা আর কখনো ফিরে আসবে না।”
ভিডিওতে এরপর দেখা যায়, তারা মসৃণ আকারের কিছু পাথর সংগ্রহ করে, যা ইতিবাচক অভিজ্ঞতার প্রতীক। রেইলি জানায়, ভালো স্মৃতিগুলো যেন এই পাথরের মতোই—যা সহজে একটির উপর আরেকটি রাখা যায় এবং যা জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
মাকেনজি উপলব্ধি করেন, তার মেয়ে যেন এক গভীর জীবন-দর্শন তুলে ধরেছে। তিনি জানান, তিনি চান তার মেয়ে ভবিষ্যতে সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক শক্তি ও সাহস অর্জন করুক।
ভিডিওটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। অনেকেই রেইলির এই ভাবনা ও মায়ের প্রতি তার ভালোবাসার প্রশংসা করেছেন। তবে কেউ কেউ মায়ের কাছে জানতে চেয়েছেন, তিনি কেন তার মেয়ের সঙ্গে অতীতের কষ্টগুলো ভাগ করে নেননি।
মাকেনজি জানান, কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা মেয়ের সঙ্গে আলোচনা করার মতো নয়। তিনি সবসময় চেষ্টা করেন মেয়ের কাছে একজন ভালো মা হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে। তিনি আরও বলেন, “আমি চাই, অন্য মায়েরা বুঝুক, সন্তানদের কাছে সবসময় পারফেক্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা তাদের মায়ের unconditional love চায়। তারা জানতে চায়, যাই ঘটুক না কেন, তারা মায়ের কাছে নিরাপদ আশ্রয় পাবে।”
মাকেনজির মতে, রেইলির এই অভিজ্ঞতা তাকে শিখিয়েছে, মানসিক আঘাত থেকে সেরে ওঠা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বিশ্বাস করেন, শিশুরা অনেক সময়ই আমাদের ভালো শিক্ষক হতে পারে। তিনি আরও বলেন, “আমি বুঝতে পেরেছি, নিজেকে ক্ষমা করাটা কতটা জরুরি। অতীতের ঘটনাগুলোর জন্য আমিই দায়ী নই, তবুও আমি নিজেকেই দোষারোপ করে যাচ্ছিলাম।”
মাকেনজি চান, ভবিষ্যতে মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক আরও গভীর হোক, এবং তিনি ধীরে ধীরে তার জীবনের গল্পগুলো মেয়ের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান। তিনি বলেন, “আমি জানি, রেইলি আমাকে ভালোবাসে এবং বিশ্বাস করে। আমি সবসময় তার নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে থাকতে চাই, যেখানে সে নির্দ্বিধায় সব কথা বলতে পারবে।”
তথ্য সূত্র: পিপল