বৃদ্ধ মহিলার হত্যাকান্ডে অভিযুক্তের স্বল্প কারাদন্ড, ক্ষোভে ফুঁসছে পরিবার।
ইংল্যান্ডের একটি ঘটনায়, ৮৬ বছর বয়সী বৃদ্ধা বেরিল পার্ডিকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ডেভিড প্যারিশকে মাত্র ছয় বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। ঘটনার শিকার নারীর পরিবার এই রায়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, প্যারিশের এই স্বল্পমেয়াদী কারাদন্ড “আজীবন কারাদন্ড” থেকে মুক্তি পাওয়ার শামিল।
২০২৩ সালের ২৭শে মার্চ, ডেভিড প্যারিশ একটি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে পালিয়ে এসে কাছাকাছি একটি গ্রামে আশ্রয় নেয়। অ্যাভন ও সোমারসেট পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্যারিশ সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত ছিল এবং ঘটনার সময় সে মাদক সেবন করেছিল। বিচারের সময় তার মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে সে আর মানসিক রোগে ভুগছে না।
পুলিশের ভাষ্যমতে, পালানোর পর প্যারিশ প্রথমে একটি সেলুনে গিয়ে চুল কাটে এবং দাড়ি কামায়। এরপর সে এক ব্যক্তির গাড়ি থেকে তাকে নামানোর চেষ্টা করে, যদিও তাতে সে সফল হয়নি। পরবর্তীতে প্যারিশ প্রতিবেশী বেরিল পার্ডির বাড়িতে প্রবেশ করে এবং একটি ছাতা দিয়ে তাকে মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় সেখানেই বৃদ্ধার মৃত্যু হয়।
পুলিশ ঘটনার রাতেই প্যারিশকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে স্থানীয় একটি খামারে কাজ করা শ্রমিক হিসেবে পরিচয় দেয় এবং মিথ্যা নাম ব্যবহার করে।
আদালতে দোষ স্বীকার করার পর প্যারিশকে ছয় বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। নিহত বেরিল পার্ডি স্থানীয় ব্রুমফিল্ড এলাকার সকলের কাছে সুপরিচিত ছিলেন এবং ২০ বছর ধরে তিনি চার্চের ওয়ার্ডেন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, “আমরা সারাজীবন এই কষ্ট নিয়ে বাঁচব যে আমরা বেরিলকে তার হত্যাকারীর হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি। এই রায়ের মাধ্যমে তার হত্যাকারী আজীবন কারাদন্ডের মতো শাস্তি এড়াতে পারল। আমরা চাই না কোনো পরিবারকে আমাদের মতো এমন কষ্টের শিকার হতে হোক। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, গুরুতর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে সমাজকে রক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।”
এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিটেকটিভ ডেবি হ্যাচ জানান, এই ঘটনার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যেকার জটিলতা আরও একবার সামনে এসেছে। তিনি আরও বলেন, “অভিযুক্তের অসুস্থতা তার কৃতকর্মের কোনো অজুহাত হতে পারে না, তবে এই দুঃখজনক ঘটনার পেছনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।”
ডিটেকটিভ হ্যাচ আরও উল্লেখ করেন, বেরিল পার্ডির নিজের বাড়িতে এমন নৃশংসভাবে খুন হওয়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তিনি নিহত নারীর জীবন ও তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, “যাঁরা তাকে চিনতেন, তাঁরা সবাই তাঁকে অত্যন্ত ভালো এবং মিশুক একজন মানুষ হিসেবে জানতেন। তাঁর মৃত্যু অনেকের জীবনে গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে। আমরা আশা করি, আজকের রায় শোকাহতদের কিছুটা হলেও শান্তি দেবে।”
তথ্য সূত্র: অ্যাভন ও সোমারসেট পুলিশ।