গ্লাসগোর কিং টুট’স ওয়াহ ওয়াহ হাট (King Tut’s Wah Wah Hut) একটি পরিচিত নাম।
ছোট আকারের এই ইনডোর সঙ্গীত মঞ্চটি (music venue) সাফল্যের ৩৫ বছর উদযাপন করছে।
নব্বইয়ের দশকে যাত্রা শুরু করা এই মঞ্চটি শুধু একটি কনসার্ট ভেন্যু নয়, বরং সঙ্গীত জগতের উদীয়মান তারকাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান।
কিং টুট’স-এর মঞ্চে গান পরিবেশন করে একসময় পরিচিতি লাভ করেছে এমন অনেক ব্যান্ড দল পরবর্তীতে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে।
কিং টুট’স-এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রিটিশ সঙ্গীত জগতের অনেক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম।
এক সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ওসিস’ (Oasis)-কে খুঁজে বের করার পেছনে ছিল এই মঞ্চের অবদান।
শুধু তাই নয়, রেডিওহেড (Radiohead), দ্য ভার্ভ (The Verve), ম্যানিক স্ট্রিট প্রিচার্স (Manic Street Preachers), ফ্লোরেন্স + দ্য মেশিন (Florence + the Machine)-এর মতো খ্যাতি সম্পন্ন ব্যান্ড দলও একসময় কিং টুট’স-এর মঞ্চে পারফর্ম করেছে।
স্কটিশ সঙ্গীতশিল্পী কেটি টনস্টল (KT Tunstall) এই ভেন্যুকে নিজের সাফল্যের অন্যতম মাইলফলক হিসেবে মনে করেন।
এই ধরনের ছোট আকারের সঙ্গীত মঞ্চগুলো বর্তমানে টিকে থাকার জন্য কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে।
অন্যদিকে যেমন ভাড়ার খরচ বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে অন্যান্য রক্ষণাবেক্ষণের খরচ।
মিউজিক ভেন্যু ট্রাস্টের (Music Venue Trust) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে শুধু যুক্তরাজ্যে ১২৫টির বেশি ছোট ভেন্যু বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে কিং টুট’স এখনো পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন, এখানকার মালিকপক্ষের দৃঢ়তা এবং একটি বড় সঙ্গীত সাম্রাজ্যের সঙ্গে এর সংযোগ বিদ্যমান।
কিং টুট’স-এর প্রতিষ্ঠাতা জুডিথ অ্যাটকিনসন এবং স্টুয়ার্ট ক্ল্যাম্পাস (Stuart Clumpas) মনে করেন, গ্লাসগোর আবহাওয়ার কারণে এখানকার মানুষেরা সাধারণত ইনডোরে বিনোদন পছন্দ করে।
সম্ভবত সে কারণেই কিং টুট’স-এর জনপ্রিয়তা আজও অটুট রয়েছে।
কিং টুট’স-এর সৃষ্টিতত্ত্বের পেছনে রয়েছে একটি মজার গল্প।
জানা যায়, ওসিস যখন তাদের শুরুতে এখানে গান করার সুযোগ চেয়েছিল, তখন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তেমন একটা সাড়া পায়নি।
তবে পরবর্তী সময়ে তাদের খ্যাতি কিংবদন্তীতে পরিণত হয়েছে।
কিং টুট’স-এর ভেতরের পরিবেশও বেশ আকর্ষণীয়।
ভেতরের পাবের (pub) দেয়ালে বিভিন্ন কনসার্টের স্মৃতিচিহ্ন সাজানো রয়েছে।
এছাড়া, সিঁড়ির প্রতিটি ধাপে রয়েছে শিল্পী এবং তাদের পারফর্ম করা সালের নাম।
কেটি টনস্টল বলেন, এই মঞ্চে পরিবেশনার সময় তিনি বিশেষ সম্মান অনুভব করেন।
এখানে শিল্পীরা নিজেদের সেরাটা দিতে অনুপ্রাণিত হন।
ছোট মঞ্চে গান করার অভিজ্ঞতা নিয়ে গায়িকা নিনা নিসবিত (Nina Nesbitt) বলেন, এখানে গান করাটা তাঁর জন্য একটা বিশেষ মুহূর্ত ছিল।
এমনকি খ্যাতি পাওয়ার পরেও অনেক শিল্পী এখানে ফিরে এসে তাদের পুরনো স্মৃতিগুলো স্মরণ করেন।
বর্তমানে কিং টুট’স-এর জেনারেল ম্যানেজার ডেভি মিলার (Davie Millar) জানান, অনেক বিখ্যাত শিল্পী এখনো এখানে আসেন এবং তাঁদের পুরনো দিনের স্মৃতিচারণা করেন।
কিং টুট’স-এর সাফল্যের পেছনে এর মালিকদের অবদান অনস্বীকার্য।
ক্ল্যাম্পাস এবং বুকিং এজেন্ট জিওফ এলিসের (Geoff Ellis) হাত ধরে ১৯৯৪ সালে ‘টি ইন দ্য পার্ক’ (T in the Park) উৎসবের সূচনা হয়।
পরবর্তীতে, এলিস ডিএফ কনসার্টের প্রধান নির্বাহী (chief executive) হন এবং লাইভ নেশন (Live Nation) এই কোম্পানির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশীদার হয়।
এই ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা কিং টুট’স-এর মতো ছোট ভেন্যুগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে।
কিং টুট’স-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, এখানে বাইরের কোনো প্রমোটর (promoter) নিজেদের কনসার্ট করার সুযোগ পান না।
এখানকার সব বুকিং অভ্যন্তরীণভাবে করা হয়।
ডেভি মিলার বলেন, তাঁরা সবসময় নতুন শিল্পীদের খুঁজে বের করেন এবং তাঁদের গান পরিবেশনের সুযোগ দেন।
তিনি আরও বলেন, মানুষ লাইভ কনসার্ট ভালোবাসে, তাই আগামীতেও কিং টুট’স তার কার্যক্রম চালিয়ে যাবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান