যুদ্ধকালীন এক চাঞ্চল্যকর গুপ্তচরবৃত্তির কাহিনী নিয়ে তৈরি হওয়া ‘অপারেশন মিন্সমিট: এ নিউ মিউজিক্যাল’ বর্তমানে ব্রডওয়েতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। শুধু তাই নয়, এই নাটকটি বিশ্বজুড়ে সফর করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যা বাংলাদেশের দর্শকদের কাছেও আগ্রহের কারণ হতে পারে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল ছিল জার্মান বাহিনীকে বিভ্রান্ত করা। সেই লক্ষ্যে ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স অফিসাররা একটি অভিনব পরিকল্পনা করেন, যার নাম ছিল ‘অপারেশন মিন্সমিট’। ১৯৪৩ সালে, তারা একটি মৃতদেহ ব্যবহার করে জার্মানদের ভুল পথে চালিত করে এবং এর মাধ্যমে সামরিক অভিযানে মিত্রশক্তির জয় আরও সহজ হয়। এই ঘটনার অনুপ্রেরণায় তৈরি হয়েছে এই মিউজিক্যাল।
‘অপারেশন মিন্সমিট’-এর গল্পটি বেশ আকর্ষণীয়। ব্রিটিশ গোয়েন্দারা স্পেনের উপকূলে একটি মৃতদেহ ফেলে আসে, যার মাধ্যমে তারা জার্মানদের মধ্যে মিত্রশক্তির আক্রমণের ভুল ধারণা তৈরি করে। মৃতদেহটিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যেন সে একজন ব্রিটিশ অফিসার।
তার কাছে রাখা হয় কিছু ভুয়া নথি, যা জার্মান গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করে। এই কৌশলের ফলস্বরূপ, জার্মানরা তাদের সৈন্যদের অন্য স্থানে মোতায়েন করে, যা সিসিলিতে মিত্রশক্তির অভিযানকে সফল করে তোলে।
মিউজিক্যালটির জন্ম হয় যুক্তরাজ্যের একটি কমেডি দল, স্পিটলিপ-এর হাত ধরে। ২০১৭ সালে তারা এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে এবং ২০১৯ সালে এর প্রথম মঞ্চায়ন হয়। দর্শকদের মধ্যে দ্রুত এর জনপ্রিয়তা বাড়ে এবং ওয়েস্ট এন্ডে সাফল্যের পর এটি এখন ব্রডওয়েতে প্রদর্শিত হচ্ছে।
২০২৩ সালে এই মিউজিক্যালটি ওয়েস্ট এন্ডে আত্মপ্রকাশ করে এবং ব্যাপক দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। এমনকি এটি ওয়েস্ট এন্ডের ইতিহাসে সেরা সমালোচিত শো-এর খ্যাতিও অর্জন করেছে।
নাটকটি ইতিমধ্যে বিভিন্ন পুরস্কার জিতেছে এবং ২০২৩ সালের অলিভিয়ার অ্যাওয়ার্ডসে সেরা নতুন মিউজিক্যাল-সহ ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন লাভ করে। ২০২৫ সালের টনি অ্যাওয়ার্ডসেও এটি সেরা মিউজিক্যালের জন্য মনোনীত হয়েছে, যা এর অসাধারণ সাফল্যের প্রমাণ।
নাটকটির নির্মাতারা জানান, তারা শুরুতে আমেরিকান প্রযোজকদের কাছ থেকে সমর্থন পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে দর্শকদের ভালোবাসাই তাদের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের উৎসাহের কারণেই ব্রডওয়ের প্রযোজকরাও এই প্রোজেক্টে আগ্রহী হন।
মিউজিক্যালটিতে অভিনয় করেছেন ডেভিড কামিং, নাতাশা হডসন, জ্যাক ম্যালোন এবং জোয়ে রবার্টস-এর মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীগণ। বর্তমানে এটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত টিকিট বিক্রি হয়েছে।
আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে ‘অপারেশন মিন্সমিট’-এর বিশ্ব সফর শুরু হতে যাচ্ছে। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে এটি প্রদর্শিত হওয়ার পর, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, মেক্সিকো এবং নিউজিল্যান্ডের মতো দেশগুলোতেও এটি যাবে। বিশ্ব সফরের অংশ হিসেবে এটি খুব শীঘ্রই বাংলাদেশের কাছাকাছি কোনো দেশেও আসতে পারে, যা আমাদের সংস্কৃতি প্রেমীদের জন্য একটি দারুণ সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ইতিমধ্যে, যারা সরাসরি ব্রডওয়েতে যেতে পারছেন না, তাদের জন্য সুখবর হলো—মিউজিক্যালটির অডিও রেকর্ড পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া, বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মেও এর গানগুলো শোনা যাচ্ছে।
যুদ্ধ এবং গুপ্তচরবৃত্তির এই আকর্ষণীয় গল্পটি শুধু একটি বিনোদনমূলক পরিবেশনা নয়, বরং এটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়কে তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: পিপলস