গ্লাসগোর বস্তি থেকে পি পি ই কেলেঙ্কারি: আল্টিমোর প্রতিষ্ঠাতা মিশেল মানের বিতর্কিত জীবন।
নব্বইয়ের দশকে, মিশেল মানের চোখে এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা ধরা পড়েছিল। ফ্লোরিডায় পরিবারের সাথে ছুটি কাটানোর সময় একটি ম্যাগাজিনে তিনি ‘মনিক’ নামের একটি ব্রা-এর বিজ্ঞাপন দেখেন, যা ছিল স্তন বড় দেখানোর কৌশল।
সেই ঘটনার সূত্র ধরে জন্ম হয় ‘আল্টিমো’র, যা একসময় অন্তর্বাসের জগতে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। বিবিসি’র দুই পর্বের একটি তথ্যচিত্র ‘দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ মিশেল মান’ সেই উত্থান-পতন-এর গল্প তুলে ধরেছে।
মিশেল মান, যিনি এক সময় ছিলেন একজন সফল উদ্যোক্তা, কীভাবে খ্যাতি অর্জন করলেন, তা এই তথ্যচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাঁর ব্যবসার শুরুটা ছিল খুবই সাধারণ—গ্লাসগোর একটি ছোট গুদামে ব্রা তৈরি করা।
নিজের ব্র্যান্ড তৈরি করার পাশাপাশি তিনি তৈরি করেছিলেন এক কিংবদন্তি। একটা সময় পর্যন্ত এমন কথাও শোনা যেত যে, জুলিয়া রবার্টস ‘এрин ব্রকোভিচ’ ছবিতে আল্টিমোর ব্রা পরেছিলেন। যদিও ছবির কস্টিউম ডিজাইনার এই কথা অস্বীকার করেছেন।
মিশেল মানের উত্থান ছিল অনেকটা রূপকথার মতো। গ্লাসগোর দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা, ১৫ বছর বয়সে স্কুল ত্যাগ করা মিশেল কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে ব্যবসার জগতে প্রবেশ করেন।
প্রথমে ফল ও সবজি বিক্রি, পরে মডেলিংয়ের মাধ্যমে তিনি অন্তর্বাসের ব্যবসায় আসেন। এই তথ্যচিত্রে তাঁর শৈশবের বন্ধু, মডেলিংয়ের সহকর্মী এবং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অনেকের সাক্ষাৎকার রয়েছে।
এমনকি, নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে সেল্ফ্রিজের অন্তর্বাস বিভাগের প্রধান ভার্জিনিয়া মারকোলিনের সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে, যিনি মিশেলের দৃঢ়তা এবং পণ্যকে যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে পৌঁছে দেওয়ার আগ্রহের বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।
মান কিভাবে এত খ্যাতি অর্জন করেছিলেন, তা অনেকের কাছেই স্পষ্ট। তাঁর সাফল্যের সাক্ষী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে তোলা ছবি এবং ভিডিও ফুটেজ এখনো বিদ্যমান।
আল্টিমোর ব্রা-এর উদ্বোধন, অস্ট্রেলিয়ার বাজারে প্রবেশের চেষ্টা, এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের নানা দিকও ক্যামেরাবন্দী হয়েছে। তিনি সবসময় চেয়েছেন, প্রচারের আলোয় থাকতে।
জনপ্রিয় মডেলদের ব্যবহার করে ব্র্যান্ডটিকে পরিচিত করে তুলেছিলেন তিনি।
তবে খ্যাতির এই আলো ধীরে ধীরে ফিকে হতে শুরু করে। জনসাধারণের মনোযোগ একবার আকৃষ্ট করার পর, তা থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
আল্টিমোর সাফল্যের মধ্যেই যেন লুকিয়ে ছিল এক গভীর ক্ষত। তথ্যচিত্র নির্মাতারা মানের সততা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
আল্টিমোর-এর ৫০ জনের বেশি কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কেউই। এমনকি, যাঁরা কথা বলেছেন, তাঁরাও তাঁদের পরিচয় গোপন রাখতে চেয়েছেন।
এরপর আসে পি পি ই কেলেঙ্কারির ঘটনা, যা মিশেল মানের খ্যাতিকে নতুন মোড় দেয়। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় তাঁর স্বামী ডগ ব্যারোম্যানের সঙ্গে মিলে ‘ভিআইপি লেন’-এর মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের অভিযোগ ওঠে।
এই কেলেঙ্কারি নিয়ে দ্য গার্ডিয়ানে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যদিও মান এবং ব্যারোম্যান উভয়েই তাঁদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এই তথ্যচিত্রটি কেবল মিশেল মানের জীবনকাহিনিই নয়, বরং এটি সংস্কৃতি এবং রাজনীতিরও একটি প্রতিচ্ছবি। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে তাঁর উত্থান, খ্যাতি এবং বিতর্ক—সবকিছুই এখানে স্পষ্ট।
এই ঘটনাগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও ব্যবসায়িক নৈতিকতা এবং স্বচ্ছতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান