খাবার ও পানীয় সংরক্ষণে রেফ্রিজারেটরের (Fridge) জুড়ি মেলা ভার। প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় এর প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। খাদ্যদ্রব্য সতেজ রাখা থেকে শুরু করে পানীয় ঠান্ডা করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে এই যন্ত্র।
কিন্তু এই অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রটির সৃষ্টি ও বিবর্তনের পেছনে রয়েছে এক দীর্ঘ ইতিহাস। আসুন, রেফ্রিজারেটরের কিছু অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
প্রাচীনকালে খাদ্য সংরক্ষণের জন্য মানুষ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। খ্রিস্টপূর্ব ১৭৮০ অব্দে মারি সাম্রাজ্যের রাজা জিমরি-লিম খাদ্য সংরক্ষণের জন্য বরফ ঘর তৈরি করেছিলেন, যা ছিল এক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। পারস্যে (বর্তমান ইরান) খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ অব্দে “ইয়াখচ্যাল” নামে বিশেষ ধরনের বরফ ঘর তৈরি করা হতো, যেখানে বরফ তৈরিরও ব্যবস্থা ছিল।
আধুনিক রেফ্রিজারেশনের ধারণা আসে অনেক পরে। ১৭৪৮ সালে গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়াম কুলেন প্রথম শীতলীকরণ প্রক্রিয়া প্রদর্শন করেন। যদিও সেই সময়ে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ ছিল না, এটি ছিল এক নতুন দিগন্তের সূচনা।
এরপর, ১৮০৫ সালে আমেরিকান উদ্ভাবক অলিভার ইভান্স রেফ্রিজারেটরের একটি কার্যকরী নকশা তৈরি করেন, কিন্তু সেটিও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। অবশেষে, জ্যাাকব পারকিন্স নামের আরেকজন আমেরিকান উদ্ভাবক ১৮৩৪ সালে বাষ্প-সংকোচন প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রথম কার্যকরী রেফ্রিজারেটর তৈরি করেন।
তাকে “রেফ্রিজারেটরের জনক” হিসেবেও অভিহিত করা হয়।
বাণিজ্যিকভাবে রেফ্রিজারেটরের ব্যবহার শুরু হয় ১৮৫০ সালে, যখন আলেকজান্ডার টোয়াইনিং প্রথম বাণিজ্যিক রেফ্রিজারেটর তৈরি করেন, যা মূলতbrewery-তে ব্যবহৃত হতো। কার্ল ভন লিন্ডে ১৮৭০-এর দশকে অ্যামোনিয়া-চালিত একটি কার্যকরী রেফ্রিজারেটর তৈরি করে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন।
১৯১৩ সালে ফ্রেড ডব্লিউ উলফ প্রথম ঘরোয়া বৈদ্যুতিক রেফ্রিজারেটর তৈরি করেন। এর পাঁচ বছর পর, ১৯১৮ সালে উইলিয়াম সি ডুরান্ট প্রথম স্বয়ংসম্পূর্ণ ঘরোয়া রেফ্রিজারেটর উন্মোচন করেন, যা বাজার কাঁপিয়ে দেয়।
রেফ্রিজারেটর শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “refrigerare” (অর্থ ঠান্ডা করা) এবং “frigus” (অর্থ ঠান্ডা) থেকে। ১৯১৮ সালে যখন প্রথম ঘরোয়া রেফ্রিজারেটর বাজারে আসে, তখন সেগুলোর দাম ছিল ৫০০ থেকে ১০০০ ডলার, যা আজকের বাজারে প্রায় ৭,০০০ থেকে ১৪,০০০ ডলারের সমান।
রেফ্রিজারেটরের ভেতরের তাপমাত্রা আদর্শভাবে ৩° সেলসিয়াস থেকে ৫° সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা উচিত। আধুনিক রেফ্রিজারেটরে অটো-ডিফ্রস্ট ডিভাইস থাকে, যা জমাট বাঁধা বরফ অপসারণ করে।
সাধারণত একটি রেফ্রিজারেটরের আয়ুষ্কাল ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত হয়, তবে বিল্ট-ইন রেফ্রিজারেটর ২০ বছর পর্যন্ত টিকতে পারে।
স্মার্ট প্রযুক্তির যুগে রেফ্রিজারেটরেরও আধুনিকীকরণ ঘটেছে। ২০০০ সালে এলজি প্রথম ওয়াইফাই-যুক্ত স্মার্ট রেফ্রিজারেটর বাজারে আনে। বর্তমানে স্মার্ট রেফ্রিজারেটরে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা রয়েছে, যেমন – টাচ স্ক্রিনের মাধ্যমে বার্তা পাঠানো বা গ্রহণ করা ইত্যাদি।
তবে, রেফ্রিজারেটরের অনেক কিছুই আমাদের অজানা। যেমন, ফ্রিজের হাতল সবচেয়ে বেশি জীবাণুযুক্ত স্থানগুলোর মধ্যে একটি। এছাড়াও, কিছু খাবার, যেমন আলু, টমেটো এবং কলা, ফ্রিজে রাখলে তাদের স্বাদ ও গঠন নষ্ট হয়ে যায়।
বাংলাদেশে রেফ্রিজারেটরের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে, তবে এখনও অনেক পরিবারে এর অভাব রয়েছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মধ্যে Samsung, Whirlpool, এবং LG এর মতো কোম্পানিগুলো উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে, উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ায় রেফ্রিজারেটরের চাহিদা বাড়ছে।
প্রতি বছর ২৯শে মে “পুট আ পিলো অন ইওর ফ্রিজ ডে” পালন করা হয়, যেখানে সৌভাগ্য কামনায় রেফ্রিজারেটরের উপর বালিশ রাখার রীতি প্রচলিত আছে।
তথ্যসূত্র: Travel and Leisure