**পরমাণু যুদ্ধের বিভীষিকা: ১৯৮৩ সালের টিভি ছবিতে শিশু অভিনেত্রীর কান্না**
বহু বছর আগের একটি টেলিভিশন সিনেমা আজও দর্শকদের মনে গভীর দাগ কেটে যায়। ১৯৮৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য ডে আফটার’ (The Day After) নামের সেই ছবিতে পারমাণবিক যুদ্ধের ভয়াবহ চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল।
সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘টেলিভিশন ইভেন্ট’ (Television Event) নামের একটি তথ্যচিত্রে (documentary) সেই সিনেমার নির্মাণ ও প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ঠান্ডা যুদ্ধের সময় নির্মিত এই সিনেমায় পারমাণবিক বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়া দুটি শহরের গল্প তুলে ধরা হয়। শহর দুটি হলো— যুক্তরাষ্ট্রের কানসাসের লরেন্স এবং মিসৌরির কানসাস সিটি।
সিনেমাটি নির্মাণের জন্য এই শহরগুলো বেছে নেওয়ার কারণ ছিল, এখানে অনেক ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি ছিল।
এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন শিশু অভিনেত্রী এলেন অ্যান্থনি। সিনেমায় জোলেইন ডালবার্গ নামের একটি চরিত্রে অভিনয় করা এলেন তথ্যচিত্রটি দেখতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।
বোমা হামলার দৃশ্য দেখে তিনি কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, “দৃশ্যগুলো আমার জন্য দেখা খুব কঠিন ছিল। কারণ, ওটা আমার শহর ছিল, আমার শৈশব ছিল…।”
সিনেমাটি তৈরির সময় নির্মাতারা চেয়েছিলেন, এতে নামী-দামী তারকাদের পরিবর্তে স্থানীয় শিল্পী ও কলাকুশলীদের বেশি সুযোগ দিতে। সেই কারণে জেসন রবার্ডস, জন লিথগো, এবং স্টিভ গুটেনবার্গের মতো অভিনেতাদের নির্বাচন করা হয়।
স্থানীয়দের মধ্য থেকে অনেককে অতিরিক্ত শিল্পী হিসেবেও নেওয়া হয়েছিল।
‘দ্য ডে আফটার’ শুরুতে দুই রাতের জন্য সম্প্রচারিত হওয়ার কথা ছিল। সিনেমাটি দর্শকদের মধ্যে গভীর ভীতির সঞ্চার করেছিল।
সিনেমার লেখক এড হিউম তথ্যচিত্রে জানান, তাঁর মূল স্ক্রিপ্টের নাম ছিল ‘সাইলেন্স ইন হেভেন’ (Silence in Heaven), যা বাইবেলের বুক অব রেভেলেশন থেকে নেওয়া হয়েছে।
সিনেমাটি মুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১০০ মিলিয়ন মানুষ এটি দেখেছিল। ছবিটির শেষে এবিসি নিউজের উপস্থাপক টেড কোপেল দর্শকদের সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন, ‘দ্য ডে আফটার’ নিছক একটি সিনেমা হলেও এর ভেতরের ঘটনা বাস্তবে ঘটার সম্ভবনা রয়েছে।
এরপর তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ শুলজ দর্শকদের আশ্বস্ত করেন যে, সিনেমার মতো ঘটনা বাস্তবে ঘটবে না।
সিনেমাটি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও জাপানের হিরোশিমায়ও দেখানো হয়। সিনেমাটির ব্যাপক প্রভাব ছিল।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগান তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, সিনেমাটি তাঁকে হতাশ করেছিল।
তথ্যচিত্রে দাবি করা হয়, সিনেমাটি পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তার রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
‘দ্য ডে আফটার’ সিনেমাটি দর্শকদের মধ্যে এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, অনেকে একে ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা হিসেবে মনে করেন।
তথ্য সূত্র: পিপলস