আমরা দৈনন্দিন জীবনে সাবান ব্যবহার করি, হাত ধোয়ার থেকে শুরু করে কাপড় পরিষ্কার করা বা এমনকি বাড়ির মেঝে পরিষ্কার করার মতো অনেক কাজে। কিন্তু কখনও কি ভেবে দেখেছেন, এই সাবান কীভাবে ময়লা দূর করে এবং জীবাণু ধ্বংস করে?
আসুন, সাবানের পেছনের বিজ্ঞানটা একটু ভালোভাবে জানার চেষ্টা করি।
সাবান আসলে কী দিয়ে তৈরি হয়? রাসায়নিকভাবে বলতে গেলে, সাবান হলো ফ্যাটি অ্যাসিডের লবণ, যা চর্বি বা তেলের সঙ্গে ক্ষারকের বিক্রিয়ার ফলে তৈরি হয়।
এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় “স্যাপোনিফিকেশন” এবং মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে এটি ব্যবহার করে আসছে। প্রাচীন ব্যাবিলনে (খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০ অব্দ) সাবান তৈরির প্রথম প্রমাণ পাওয়া যায়।
তখনকার রেসিপিটা ছিল খুব সহজ—পশুর চর্বি এবং কাঠের ছাই মিশিয়ে সাবান তৈরি করা হতো। সময়ের সাথে সাথে সাবান তৈরির প্রক্রিয়া উন্নত হয়েছে এবং এখন বাজারে নানা ধরনের সাবান পাওয়া যায়।
সাবান কীভাবে কাজ করে? সাবানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এটি “ইমালসিফিকেশন” করতে পারে। সহজ কথায়, সাবান তেল এবং পানির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
সাবান অণুগুলো অনেকটা কাঁটার মতো, যার একদিকে জল ভালোবাসে (হাইড্রফিলিক) এবং অন্যদিকে তেল ভালোবাসে (হাইড্রফোবিক)। যখন সাবান ময়লার সংস্পর্শে আসে, তখন এর “হাইড্রফোবিক” অংশটি তেলের সাথে মিশে যায়, আর “হাইড্রফিলিক” অংশটি পানির সাথে মিশে থাকে।
এভাবে সাবান অণুগুলো ময়লার চারপাশে জমা হয়ে একটা আবরণ তৈরি করে, যা ময়লাকে পানি থেকে আলাদা করে দেয়। এই প্রক্রিয়াকে “মিশেল” তৈরি হওয়া বলে।
এরপর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেললে ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। একই উপায়ে, সাবান অনেক জীবাণুকেও ধ্বংস করে।
কিছু জীবাণুর চর্বিযুক্ত আবরণ থাকে, যা সাবান ভেঙে দিতে পারে এবং জীবাণুগুলোকে মেরে ফেলে। এমনকি যে জীবাণুগুলোকে সাবান সরাসরি মারতে পারে না, তাদেরও সাবান কণার সাথে আটকে দেয়, ফলে সহজে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা যায়।
তাহলে, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান কি সাধারণ সাবানের চেয়ে ভালো? অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবানগুলোতে “ট্রাইক্লোসান” বা “ট্রাইক্লোকার্বান”-এর মতো উপাদান থাকে, যা জীবাণু মারতে সাহায্য করে।
যদিও এই ধরনের সাবানকে বেশি কার্যকর হিসেবে বাজারজাত করা হয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (U.S. Food and Drug Administration) বলছে, সাধারণ হাত ধোয়ার জন্য বিশেষ অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবানের প্রয়োজন নেই। যেকোনো সাধারণ সাবানই যথেষ্ট।
বরং, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহারের কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এই ধরনের সাবান আমাদের ত্বকের উপকারী ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও মেরে ফেলে।
এই ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলো আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং ক্ষতিকর জীবাণুদের বিস্তার হতে বাধা দেয়। বিজ্ঞানীরা আরও আশঙ্কা করেন যে, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ক্রমাগত ব্যবহারের ফলে “সুপার জার্ম”-এর জন্ম হতে পারে, যা সহজে নিরাময় করা যায় না।
সাবান ও জলের পরিবর্তে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করলে কি একই ফল পাওয়া যায়? হ্যান্ড স্যানিটাইজারে সাধারণত ৬০% অ্যালকোহল থাকে, যা অনেক ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের চর্বিযুক্ত আবরণকে ভেঙে দিতে পারে।
কিন্তু হ্যান্ড স্যানিটাইজার সব ধরনের জীবাণু মারতে পারে না। এছাড়াও, এটি ত্বক থেকে ময়লা বা অন্য কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন কীটনাশক বা ভারী ধাতু দূর করতে পারে না।
তাই, হ্যান্ড স্যানিটাইজার হাতের কাছে না থাকলে ব্যবহারের জন্য ভালো, তবে এটি সাবান ও জলের বিকল্প হতে পারে না।
সবশেষে, মনে রাখতে হবে, সাবান ময়লা এবং জীবাণু দূর করার সবচেয়ে ভালো উপায়। তাই, নিয়মিত সাবান ও জল দিয়ে হাত ধোয়া অপরিহার্য।
কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড ধরে ভালোভাবে হাত ঘষে ধুতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাময়িকভাবে জীবাণু মারতে পারে, তবে সুযোগ পেলেই সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার অভ্যাস করা উচিত।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure