পেরু: ইনকা সাম্রাজ্যের দেশ – ২৫টি আকর্ষণীয় তথ্য। দক্ষিণ আমেরিকার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো পেরু, যেখানে প্রকৃতির বিস্ময় আর সংস্কৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন বিদ্যমান।
বিশাল এই দেশটির রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, এবং অসাধারণ সব পর্যটন কেন্দ্র, যা ভ্রমণ প্রেমীদের জন্য এক আকর্ষণীয় গন্তব্য। আসুন, পেরু সম্পর্কে ২৫টি আকর্ষণীয় তথ্য জেনে নেওয়া যাক, যা আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
ভূগোল:
১. পেরু দক্ষিণ আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশ। এর আয়তন প্রায় ১,২৮৫,২১৬ বর্গকিলোমিটার (৪৯৬,২২৫ বর্গ মাইল)।
২. পেরুর উত্তরে রয়েছে ইকুয়েডর ও কলম্বিয়া, পূর্বে ব্রাজিল, দক্ষিণে বলিভিয়া ও চিলি এবং পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগর।
৩. পেরুকে ২৫টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। এখানে পর্বত, বৃষ্টিবন, মরুভূমি এবং উপকূলীয় অঞ্চলের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ ভূ-প্রকৃতি বিদ্যমান।
ভাষা ও সংস্কৃতি:
৪. পেরুতে তিনটি সরকারি ভাষা প্রচলিত: স্প্যানিশ, কুইচুয়া এবং আয়মারা।
৫. পেরুতে প্রায় ৪৭টির বেশি আদিবাসী ভাষায় মানুষ কথা বলে।
৬. পেরুর প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ মানুষের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ রাজধানী শহর লিমায় বাস করে।
৭. পেরুর রাজধানী লিমা দেশটির বৃহত্তম শহর এবং অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
জলবায়ু:
৮. পেরুতে বিভিন্ন ধরনের জলবায়ু বিদ্যমান। এখানে বিশ্বের প্রায় ৩০টির বেশি প্রধান জলবায়ু দেখা যায়।
৯. উপকূলীয় অঞ্চলগুলো হয় শুষ্ক অথবা উপ-ক্রান্তীয় মরুভূমি, আর আমাজনের অংশটি উষ্ণ ও আর্দ্র ক্রান্তীয় বৃষ্টিবন।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:
১০. ইনকা সাম্রাজ্যের লোকেরা তাদের দেশকে ‘তাহুয়ানতিনসুয়ো’ নামে ডাকত, যার অর্থ ‘চার অঞ্চলের মিলন’। এই সাম্রাজ্যটিতে কুইচুয়া, আন্টিসুয়ো, কন্টিসুয়ো এবং কল্লাসুয়ো – এই চারটি অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল।
১১. একসময় ইনকা সাম্রাজ্য আধুনিক পেরু, আর্জেন্টিনা, কলম্বিয়া, বলিভিয়া, চিলি এবং ইকুয়েডরের কিছু অংশজুড়ে বিস্তৃত ছিল।
খাবার ও পানীয়:
১২. পেরুতে আলুর ৪,০০০-এর বেশি প্রজাতি রয়েছে।
১৩. পেরুর জাতীয় খাবার হলো সেভিচে, যা তাজা মাছের টুকরোগুলো লেবুর রসে ভিজিয়ে তৈরি করা হয়।
১৪. প্রতি বছর অক্টোবরের দ্বিতীয় শুক্রবার এখানে গিনিপিগ উৎসব পালন করা হয়। এই উৎসবে গিনিপিগ-কে বিভিন্ন পোশাকে সাজানো হয় এবং এরপর আগুনে ঝলসে খাওয়া হয়।
১৫. পেরুর জাতীয় পানীয় হলো পিসকো সওর, যা প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম শনিবারে উদযাপন করা হয়।
দর্শনীয় স্থান:
১৬. পেরুর নাজকা মরুভূমিতে অবস্থিত নাজকা লাইনস নামক বিশাল চিত্রকর্মগুলো পর্যটকদের কাছে আজও এক রহস্য। এগুলো সম্ভবত খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দ থেকে ৫০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নাজকা সভ্যতার লোকেরা তৈরি করেছিল।
১৭. মাকচুপিচু, যা ইনকা সভ্যতার এক উজ্জ্বল নিদর্শন। প্রতি বছর এখানে প্রায় ১৬ লক্ষ পর্যটকের আগমন ঘটে।
১৮. আমাজন নদীর উৎপত্তিস্থল পেরুতে।
১৯. পেরুর ইকা অঞ্চলের সেরো ব্ল্যাঙ্কো বিশ্বের বৃহত্তম বালুকণা, যার উচ্চতা ২,০৭৭ মিটার (৬,৮১৭ ফুট)।
২০. ভিনিকুঙ্কা বা রেইনবো মাউন্টেন, যা কুসকো থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর বিভিন্ন রঙের স্তর লক্ষ লক্ষ বছর ধরে খনিজ পদার্থের কারণে গঠিত হয়েছে।
২১. কোটাহুয়াসি ক্যানিয়ন বিশ্বের গভীরতম ক্যানিয়নগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর গভীরতা ৩,৫৩৫ মিটার (১১,৫৯৫ ফুট)।
২২. পেরু ও বলিভিয়ার সীমান্তে অবস্থিত লেক টিটিকাকা বিশ্বের উচ্চতম হ্রদ, যা নৌচলাচলের জন্য উপযুক্ত। এর উচ্চতা ৩,৮১২ মিটার (১২,৫0৭ ফুট)।
জীববৈচিত্র্য:
২৩. বিশ্বের অর্ধেকের বেশি আলপাকা পেরুতে পাওয়া যায়।
২৪. পেরুর জাতীয় প্রাণী হলো ভিকুয়ানা, যা খুবই মূল্যবান পশমের জন্য পরিচিত।
২৫. পুয়া রাইমন্ডি নামক ফুলটি পেরুতে জন্মায় এবং এটি একবার ফুল দেয়, যা প্রায় ৮০ থেকে ১৫০ বছর পর্যন্ত সময় নিতে পারে।
পেরুর এই আকর্ষণীয় দিকগুলো একে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি বিশেষ গন্তব্য করে তোলে। প্রকৃতির সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন, বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, এবং সুস্বাদু খাবারের অভিজ্ঞতা পেতে পেরু ভ্রমণ আপনার জন্য অবিস্মরণীয় হতে পারে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure