মার্কিন সমর্থনপুষ্ট একটি ইসরায়েলি কোম্পানির তৈরি করা স্পাইওয়্যার (গুপ্তচরবৃত্তি সফটওয়্যার) ব্যবহার করে ইউরোপের বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে।
অনুসন্ধানী সংস্থা সিটিজেন ল্যাব-এর এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ইতালির একটি অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যমের দুজন সম্পাদকও রয়েছেন।
সিটিজেন ল্যাব-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ‘প্যারাগন সলিউশনস’ নামের একটি ইসরায়েলি কোম্পানির তৈরি করা ‘গ্রাফাইট’ নামের স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে। এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে অন্তত তিনজন ইউরোপীয় সাংবাদিকের ফোন হ্যাক করা হয়েছে।
এই ঘটনার জেরে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং সাংবাদিকদের উপর নজরদারির জন্য সরকার এই স্পাইওয়্যার ব্যবহার করেছে কিনা, তা নিয়েও বিতর্ক চলছে।
ইউরোপীয় কমিশন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “যদি এই অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে, ইইউ আইন কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে।”
এদিকে, প্যারাগন সলিউশনস নিজেদের রক্ষা করতে উঠেপড়ে লেগেছে। তারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে।
তবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। শোনা যাচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ তাদের সঙ্গে ২ মিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে।
জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ইতালির অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম ‘ফ্যানপেজ.ইট’-এর নাপোলি অফিসের প্রধান সিরো পেলেগ্রিনো এবং সম্পাদক ফ্রান্সেসকো ক্যানসেল্লাটোও রয়েছেন।
সিটিজেন ল্যাব-এর গবেষকরা জানিয়েছেন, গ্রাফাইট স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে সাংবাদিকদের ফোনে আড়ি পাতা হয়েছে।
প্যারাগন সলিউশনস-এর তৈরি করা এই স্পাইওয়্যার এতটাই শক্তিশালী যে ব্যবহারকারীর কোনো প্রকার কার্যক্রম ছাড়াই এটি ডিভাইসে প্রবেশ করতে পারে।
এমনকি, ব্যবহারকারী বুঝতেই পারে না যে তার ফোনের ডেটা অন্য কেউ হাতিয়ে নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের স্পাইওয়্যার সাংবাদিকদের জন্য মারাত্মক হুমকি।
কারণ এর মাধ্যমে তাঁদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা হয় এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার কাজ কঠিন হয়ে পড়ে।
ইতালির সংসদীয় কমিটি (COPASIR) ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি।
তবে, তারা স্বীকার করেছে যে সরকার কিছু সমাজকর্মী এবং অভিবাসন-সংক্রান্ত বিষয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের উপর নজরদারি করেছে।
প্যারাগন সলিউশনস এবং ইতালির মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গেছে বলে জানা গেছে।
তবে, তারা উভয়ই এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য পেশ করেছে। প্যারাগন জানিয়েছে, ক্যানসেল্লাটোর ঘটনা তদন্তে ইতালির সরকার তাদের সাহায্য নিতে অস্বীকার করেছিল।
অন্যদিকে, ইতালীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা জাতীয় নিরাপত্তার কারণে প্যারাগনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারও এই ঘটনার বিষয়ে উদ্বিগ্ন।
কারণ, প্যারাগনের সঙ্গে তাদের চুক্তি রয়েছে। এই ঘটনায় মার্কিন সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস