বিধবা হওয়ার শোক: বইয়ের দুনিয়ায় আশ্রয় খুঁজে পাওয়া এক ইনফ্লুয়েন্সারের গল্প
সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, বিশেষ করে Instagram-এর হাত ধরে, বইয়ের জগৎ এখন অনেকের কাছেই পরিচিত। @BookswithBrielle নামক Instagram পেজের মাধ্যমে পরিচিত ব্রিয়েল পার্সুন ছিলেন এমনই একজন, যিনি বইয়ের আলোচনা এবং পাঠকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতেন। তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ছিল ১৭,০০০ এর বেশি।
২০২০ সালে এই প্ল্যাটফর্মে তাঁর যাত্রা শুরু হয়, এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি “বুকস্টাগ্রাম” জগতে পরিচিতি লাভ করেন।
কিন্তু ব্রিয়েলের জীবন একটি অপ্রত্যাশিত মোড় নেয়। বইয়ের পাতায় প্রেম ও ভালোবাসার গল্প বলতে ভালোবাসলেও, বাস্তব জীবন সবসময় তাঁর কল্পনার মতো ছিল না। বইয়ের জগত থেকে বাস্তবতায় ফিরলে তিনি অনুভব করেন, জীবনের অনেক কিছুই “চিরকাল সুখে থাকার” গল্পের মতো নয়।
তাঁর জীবনের এই কঠিন বাস্তবতার শুরু হয় যখন তিনি টাইলার নামক একজনকে বিয়ে করেন এবং তাঁদের কোল আলো করে আসে এক পুত্রসন্তান, যার নাম রাখা হয় কলবি।
কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে, বিয়ের এক বছর পার না হতেই, ব্রিয়েলের জীবনে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। প্যানক্রাইটিসের জটিলতার কারণে তাঁর স্বামী টাইলারের অকাল প্রয়াণ ঘটে। সন্তান জন্মের চার মাস পরেই, ব্রিয়েলকে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়।
প্রিয়জন হারানোর এই বেদনা তাকে একা করে দেয়।
এই শোকের সময়ে, ব্রিয়েল তাঁর পরিবার, বন্ধু এবং শুভাকাঙ্ক্ষীদের পাশে পান। বন্ধু এবং পরিবারের সদস্যরা ব্রিয়েলের ছেলেকে দেখাশোনা করা থেকে শুরু করে টাইলারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করেন। বন্ধুদের উদ্যোগে একটি GoFundMe পেজ খোলা হয়, যা ব্রিয়েলের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করে।
শোকের এই সময়ে ব্রিয়েল নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করেন। তিনি বুঝতে পারেন, শোককে সবসময় জীবনের ওপর চেপে বসতে দেওয়া যায় না। এই কঠিন সময়ে ব্রিয়েল বইয়ের জগতে আশ্রয় খুঁজে নেন, বিশেষ করে ফ্যান্টাসি ঘরানার বইগুলো তাঁকে বাস্তব জগৎ থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। রেবেকা ইয়ারোসের লেখা ‘ওনিক্স স্টর্ম’ বইটি ছিল তাঁর মানসিক শান্তির অন্যতম অবলম্বন।
বর্তমানে, ব্রিয়েল তাঁর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে শোকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার একটি নতুন পথের সন্ধান করছেন। তিনি তাঁর Instagram পেজে শোকের অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরেন, যা অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তিনি অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার পাশাপাশি, নিজের অনুসারীদের সঙ্গে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
তিনি বুঝতে পারেন, তাঁর মতো পরিস্থিতিতে থাকা অনেক নারী আছেন, যাঁরা হয়তো তাঁদের গল্প বলতে চান, কিন্তু সঠিক পথের সন্ধান পান না। ব্রিয়েলের এই প্রয়াস, অন্যদের জীবনেও আলো ফেলেছে।
ব্রিয়েল তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে তাঁর শোকের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পাশাপাশি, বইয়ের মাধ্যমে কীভাবে এই শোককে জয় করা যায়, সেই বিষয়েও আলোচনা করেন। তিনি অন্যদের আত্ম-উন্নয়নমূলক বই পড়ার পরামর্শ দেন, যা তাঁদের শোক থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে পারে। ব্রিয়েলের মতে, শোককে সঙ্গে নিয়েই, জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
তথ্য সূত্র: পিপল