শিরোনাম: চিকিৎসার পরিবর্তে ধর্মীয় বিশ্বাসের পথে: আমেরিকার এক দম্পতির কারাদণ্ড।
যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। জন্মের কয়েক দিন পরেই মারা যাওয়া এক নবজাতকের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে সম্প্রতি কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে তার মা-বাবাকে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে তাদের শিশুকন্যা অ্যাবিগেলের মৃত্যু হয়, যার প্রধান কারণ ছিল একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা, যা চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো সম্ভব ছিল।
খবরে প্রকাশ, অ্যাবিগেলের বাবা-মা, জোশুয়া ও র্যাচেল পাইলান্ড, তাদের মেয়ের চিকিৎসার পরিবর্তে ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জন্মের সময় অ্যাবিগেলের জন্ডিস দেখা দিলেও তারা কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নেননি।
তারা বিশ্বাস করতেন, ঈশ্বরই তাদের সন্তানের আরোগ্য করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, জন্মের মাত্র তিন দিনের মাথায় অতিরিক্ত বিলিরুবিনের কারণে অ্যাবিগেলের মৃত্যু হয়।
মামলার শুনানিতে জানা যায়, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে, বিচারকরা এই দম্পতিকে দ্বিতীয়-ডিগ্রি হত্যা এবং প্রথম-ডিগ্রি শিশু নির্যাতনের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেন।
এরপর, গত ১১ই জুন, আদালত তাদের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন। জোশুয়া ও র্যাচেল পাইলান্ডকে সর্বনিম্ন ২০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৪৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
তদন্তে জানা যায়, অ্যাবিগেলের জন্মের পর ধাত্রী (midwife) তাদের মেয়েকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে বলেছিলেন। কিন্তু তারা তা করতে রাজি হননি।
বরং তারা তাদের বন্ধুদের ডেকে এনে মেয়ের জন্য প্রার্থনা করতে থাকেন, যেন ঈশ্বর তাকে সুস্থ করে তোলেন। অ্যাবিগেলের মৃত্যুর পর, তারা দ্রুত কর্তৃপক্ষের কাছে খবরটি জানাননি।
আদালতে জোশুয়া পাইলান্ড তার সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, ঈশ্বরই সব রোগ সারিয়ে তুলবেন। আমি যদি সুযোগ পেতাম, তাহলে আমি আমার মেয়ের জীবন ঈশ্বরের হাতেই সমর্পণ করতাম।”
এই ঘটনার পর, শিশুদের প্রতি অবহেলার কারণে তাদের আগের দুই সন্তানকে তাদের হেফাজত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
আদালতের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আপিল করার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভিভাবকদের সচেতনতা খুবই জরুরি। কোনো অসুস্থতা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ধর্মীয় বিশ্বাস অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির সাহায্য নেওয়া অপরিহার্য। এই ঘটনাটি আমাদের সমাজের জন্য একটি সতর্কবার্তা, যেখানে শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
তথ্যসূত্র: পিপল