জাপানি ফ্যাশন: গ্রীষ্মের পোশাকের অনুপ্রেরণা ও বাংলাদেশের জন্য এর প্রাসঙ্গিকতা
জাপান ভ্রমণে গিয়ে সেখানকার ফ্যাশন ট্রেন্ডগুলো দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এমন একজন ভ্রমণ বিষয়ক কনটেন্ট ক্রিয়েটর। টোকিও এবং কিয়োটোর রাস্তায় দেখা কিছু স্টাইলকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে একটি ‘ক্যাপসুল ওয়ারড্রোব’ তৈরি করা যায়, সেই বিষয়ে কিছু ধারণা এখানে তুলে ধরা হলো। এই ফ্যাশনগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য হলো – নূন্যতম পোশাকের সমাহার, যা যেকোনো অনুষ্ঠানের জন্য উপযুক্ত। চলুন, দেখে নেওয়া যাক জাপানি স্টাইলের পোশাকগুলো, যা বাংলাদেশের মানুষের ফ্যাশন ধারণাকেও নতুন দিক দিতে পারে।
১. ওভারসাইজড বাটন-আপ শার্ট (Oversized Button-up Shirt):
জাপানে প্রায়ই দেখা যায়, ঢিলেঢালা বাটন-আপ শার্ট পরে আছেন অনেকে। গরমের জন্য এই ধরনের পোশাক খুবই আরামদায়ক। এটি ব্লেজার, কোট বা শুধু একটি শার্ট হিসেবেও পরা যেতে পারে। একটি হালকা ওজনের বাটন-আপ শার্ট আপনার পোশাকের তালিকায় থাকলে, তা যেকোনো সময়ের জন্য উপযুক্ত। সাদা বা হালকা রঙের বাটন-আপ শার্ট, যা গরমে আপনাকে এনে দিতে পারে স্বস্তি। বাংলাদেশে গরমকালে আরামের জন্য সুতির কাপড়ের শার্ট খুবই উপযোগী। দাম: প্রায় ৫,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা (ব্র্যান্ড ও কাপড়ের মান অনুযায়ী)।
২. ক্লাসিক স্নিকার্স (Classic Sneakers):
জাপানে ‘ড্যাড স্নিকার্স’-এর চল বেশ জনপ্রিয়। আরামদায়ক হওয়ায় ভ্রমণের সময় এই ধরনের জুতা আদর্শ। নিউ ব্যালেন্স (New Balance) -এর মতো ব্র্যান্ডের স্নিকার্স বেছে নিতে পারেন। সাদা বা হালকা রঙের স্নিকার্স সব ধরনের পোশাকের সঙ্গে মানানসই। দাম: প্রায় ৮,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা।
৩. মিনি শোল্ডার ব্যাগ (Mini Shoulder Bag):
ছোট আকারের শোল্ডার ব্যাগ বা ক্রস বডি ব্যাগ জাপানে খুব জনপ্রিয়। অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি থেকে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখতে এই ধরনের ওয়াটার-প্রুফ ব্যাগ দারুণ কাজে আসে। ইউনিক্লোর (Uniqlo) মতো ব্র্যান্ডের ব্যাগ বেছে নিতে পারেন। দাম: ১,৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা।
৪. লিনেন ড্রেস (Linen Dress):
গরমের জন্য লিনেন কাপড়ের পোশাক খুবই আরামদায়ক। একটি ঢিলেঢালা লিনেন শার্ট ড্রেস আপনার গ্রীষ্মের পোশাকের জন্য আদর্শ। হালকা রঙের, প্রিন্টবিহীন পোশাক বেছে নিন, যা অনেকদিন ব্যবহার করা যাবে। বাংলাদেশের গরম আবহাওয়ার জন্য লিনেন খুবই উপযোগী। দাম: ৪,০০০ থেকে ৮,০০০ টাকা।
৫. স্লিপ-অন শু (Slip-on Shoes):
স্লিপ-অন শু, যা সহজে পরা যায় এবং জাপানি ফ্যাশনের সঙ্গে মানানসই। ওনিৎসুকা টাইগার (Onitsuka Tiger) -এর মতো ব্র্যান্ডের জুতা বেছে নিতে পারেন। সাদা-কালো বা আপনার পছন্দের যেকোনো রঙের স্লিপ-অন শু-এর সাথে যেকোনো পোশাক পরা যেতে পারে। দাম: ৭,০০০ থেকে ১১,০০০ টাকা।
৬. সানগ্লাস (Sunglasses):
একটি ভালো সানগ্লাস আপনার সংগ্রহে থাকা জরুরি। চোখের সুরক্ষার পাশাপাশি এটি আপনার স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করে। ক্লাসিক আকারের সানগ্লাস বেছে নিতে পারেন। অনলাইন বা লোকাল মার্কেটে বিভিন্ন দামে সানগ্লাস পাওয়া যায়। দাম: ১,০০০ থেকে ৩,০০০ টাকা।
৭. রিবেড নিট সক্স (Ribbed Knit Socks):
জুতার সাথে মানানসই মোজা, আপনার ফ্যাশনকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। ইউনিক্লোর (Uniqlo) -এর মতো ব্র্যান্ডের মোজা বেছে নিতে পারেন। বিভিন্ন রঙের মোজা কিনে, পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পরতে পারেন। দাম: ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা (প্রতি জোড়া)।
৮. টি-শার্ট (T-shirt):
একটি ভালো টি-শার্ট আপনার পোশাকের অপরিহার্য অংশ। জাপানি ব্র্যান্ড কম দে গারসোঁ (Comme des Garçons) -এর টি-শার্ট বেছে নিতে পারেন। সাদা বা যেকোনো হালকা রঙের টি-শার্ট, যা যেকোনো পোশাকের সাথে পরা যেতে পারে। দাম: ৩,০০০ থেকে ৬,০০০ টাকা।
৯. ক্রস বডি ব্যাগ (Crossbody Bag):
ছোট আকারের ক্রস বডি ব্যাগ, যা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। জে ডব্লিউ পেই (JW Pei) -এর মতো ব্র্যান্ডের ব্যাগ বেছে নিতে পারেন। এই ধরনের ব্যাগ রাতে বা দিনের বেলাতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। দাম: ২,০০০ থেকে ৪,০০০ টাকা।
১০. সোয়েটার ভেস্ট (Sweater Vest):
একটি ভেস্ট আপনার সাধারণ পোশাককে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে। সাদা বা অন্য কোনো হালকা রঙের ভেস্ট, যা টি-শার্ট বা শার্টের উপরে পরা যেতে পারে। এই ধরনের পোশাক, আপনার ক্যাজুয়াল লুককে একটি স্মার্ট টাচ দিতে পারে। দাম: ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা।
১১. ব্যারে্ল জিন্স (Barrel Jeans):
ঢিলেঢালা ব্যারে্ল জিন্স, যা আরামদায়ক এবং স্টাইলিশ। এভারলেইন (Everlane) -এর মতো ব্র্যান্ডের জিন্স বেছে নিতে পারেন। গাঢ় রঙের জিন্স, রাতের বেলা পরার জন্য উপযুক্ত। দাম: ৬,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা।
১২. বক্স-কাট টি-শার্ট (Box-Cut Tee):
একটি ক্লাসিক বক্স-কাট টি-শার্ট আপনার সংগ্রহে থাকা দরকার। এভারলেইন (Everlane) -এর মতো ব্র্যান্ডের টি-শার্ট বেছে নিতে পারেন। এই ধরনের টি-শার্ট, যেকোনো আকারের শরীরের সাথে মানানসই। দাম: ২,০০০ থেকে ৪,০০০ টাকা।
১৩. স্লিঙব্যাক পাম্পস (Slingback Pumps):
কাজের জন্য বা যেকোনো অনুষ্ঠানে পরার জন্য, স্লিঙব্যাক পাম্পস একটি ভালো বিকল্প। আরামদায়ক হিলযুক্ত জুতা বেছে নিন, যা আপনাকে সারাদিন স্বস্তি দেবে। স্যাম এডেলম্যান (Sam Edelman)-এর মতো ব্র্যান্ডের জুতা দেখতে পারেন। দাম: ৬,০০০ থেকে ১২,০০০ টাকা।
১৪. ট্রেন্স কোট (Trench Coat):
একটি ক্লাসিক ট্রেন্স কোট আপনার পোশাকের সংগ্রহে থাকা আবশ্যক। যেকোনো ঋতুতে, এটি আপনাকে স্টাইলিশ লুক দিতে পারে। হালকা বা গাঢ় যেকোনো রঙের ট্রেন্স কোট বেছে নিতে পারেন। বর্ষাকালে, এটি আপনাকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করবে। দাম: ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা।
১৫. ব্লেজার (Blazer):
একটি ভালো ব্লেজার আপনার পোশাকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্যাজুয়াল জিন্স এবং স্নিকার্সের সাথেও ব্লেজার পরলে, তা আপনাকে স্মার্ট লুক দেবে। বিভিন্ন ডিজাইন ও রঙের ব্লেজার পাওয়া যায়, যা আপনার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই। দাম: ৩,০০০ থেকে ৭,০০০ টাকা।
১৬. বম্বার জ্যাকেট (Bomber Jacket):
বম্বার জ্যাকেট, একটি ক্লাসিক এবং স্টাইলিশ পোশাক। হালকা ওজনের বম্বার জ্যাকেট, যেকোনো পোশাকের সাথে পরা যেতে পারে। এটি আপনার সাধারণ পোশাকেও ভিন্নতা আনতে পারে। দাম: ২,০০০ থেকে ৫,০০০ টাকা।
উপসংহার:
জাপানি ফ্যাশন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, এই পোশাকগুলো আপনি আপনার বর্তমান সংগ্রহে যোগ করতে পারেন। আপনার বাজেট ও রুচি অনুযায়ী, পোশাক নির্বাচন করে, নিজের স্টাইল তৈরি করুন।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল+লেজার