“চ্যালেঞ্জ ট্র্যাভেল”-এর জোয়ার: দুঃসাহসিক অভিযানে আগ্রহী পর্যটকদের নতুন গন্তব্য
বর্তমান বিশ্বে, ভ্রমণের ধারণাটি ধীরে ধীরে তার চিরাচরিত গণ্ডি ছাড়িয়ে নতুন রূপ নিচ্ছে। এখন আর নিছক সমুদ্র সৈকতে যাওয়া বা আরামদায়ক হোটেলে থাকার মধ্যে ভ্রমণ সীমাবদ্ধ নেই।
বরং, দুঃসাহসিক অভিযান এবং শারীরিক ও মানসিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাওয়াটাই যেন অনেকের কাছে প্রধান আকর্ষণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই নতুন ধারার ভ্রমণের নাম দেওয়া হয়েছে ‘চ্যালেঞ্জ ট্র্যাভেল’ (Challenge Travel)।
পর্যটকদের এই নতুন চাহিদার কথা মাথায় রেখে, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম সাজাচ্ছে। ব্ল্যাক টমেটো (Black Tomato) নামক একটি ভ্রমণ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা টম মার্চেন্ট জানান, “মানুষ এখন সাহসী এবং চ্যালেঞ্জিং ভ্রমণ অভিজ্ঞতা চায়।
তাদের ‘গেট লস্ট’ (Get Lost) নামের বিশেষ ভ্রমণ প্যাকেজটি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে, যেখানে অভিযাত্রীদের পেরুর আন্দিজ পর্বতমালা অথবা মঙ্গোলিয়ার স্তেপ অঞ্চলে প্রকৃতির মাঝে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ নিতে হয়। এই ধরনের ভ্রমণে অংশগ্রহণকারীরা বন্য পরিবেশে নিজেদের মতো করে পথ খুঁজে নেয় এবং সভ্যতায় ফিরে আসে।
মার্চেন্ট আরও যোগ করেন, গত বছরের তুলনায় তাদের এই ধরনের ভ্রমণের বুকিংয়ে প্রায় ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে।
কেবল ব্ল্যাক টমেটো নয়, আরও অনেক ভ্রমণ সংস্থা এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং ভ্রমণের পরিকল্পনা করছে। অভিজ্ঞ ভ্রমণ পরামর্শক এবং ট্যুর কোম্পানিগুলো এখন এমন সব অভিজ্ঞতা তৈরি করছে, যা হয়তো প্রথমে কঠিন মনে হবে, কিন্তু পরে তা অত্যন্ত মূল্যবান এবং শিক্ষণীয় হয়ে উঠবে।
যেমন, Pelorus Travel-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিমি ক্যারল (Jimmy Carroll) বলেন, “অভিযাত্রীরা এখন সত্যিকারের চ্যালেঞ্জ এবং নির্জনতা খুঁজে বেড়াচ্ছে।
এই ধরনের ভ্রমণে ধৈর্য, শক্তি এবং পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা খুবই জরুরি।
আসুন, এমন কিছু ভ্রমণের অভিজ্ঞতার কথা জেনে নেওয়া যাক, যা আপনার সাহস এবং সক্ষমতার পরীক্ষা নেবে:
১. ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার হেলিস্কিইং (Heliskiing):
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে অবস্থিত সিএমএইচ হেলিস্কিইং অ্যান্ড সামার অ্যাডভেঞ্চার্স (CMH Heli-Skiing & Summer Adventures) -এর মত প্রতিষ্ঠানগুলো হেলিস্কিইংয়ের (পাহাড়ের চূড়া থেকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে স্কিইং শুরু করা) সুযোগ করে দেয়।
তাদের প্রশিক্ষিত গাইডরা বিশাল এলাকা জুড়ে স্কিইংয়ের ব্যবস্থা করেন।
২. বতসোয়ানার খোলা আকাশের নিচে ক্যাম্পিং (Open-air Camping):
আফ্রিকার দেশ বতসোয়ানার (Botswana) কালাহারি মরুভূমির (Kalahari Desert) প্রান্তে অবস্থিত জ্যাকস ক্যাম্পের (Jack’s Camp) অভিজ্ঞতাও অসাধারণ।
এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে খোলা আকাশের নিচে ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা। তারা কুবু দ্বীপের (Kubu Island) মতো স্থানে তাঁবু খাটিয়ে প্রকৃতির স্বাদ নিতে পারে।
৩. ইউটাহ-এর হাট-টু-হাট ট্রেকিং (Hut-to-Hut Trekking):
যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ রাজ্যে (Utah) অবস্থিত ওয়েস্টার্ন উয়িন্তা হাট সিস্টেম (Western Uinta Hut System) ট্রেকিংপ্রেমীদের জন্য দারুণ একটি সুযোগ।
এখানে বিভিন্ন স্থানে বিশেষভাবে তৈরি করা ছোট কুটির (Yurts) রয়েছে, যেখানে পর্বতারোহীরা বিশ্রাম নিতে পারে।
এর ফলে, হাইকিং, বাইকিং (biking) এবং মাছ ধরার মতো কার্যক্রমগুলো আরও সহজ হয়।
৪. মরক্কোতে ‘মিশন: ইম্পসিবল’-এর মতো অভিযান (Impossible Missions):
মরক্কোর আটলাস পর্বতমালায় (Atlas Mountains) ট্রেকিং, মরুভূমির বালির টিলার ওপর রেসিং এবং মারাকেশের (Marrakesh) একটি বাড়ি থেকে র্যাপেলিংয়ের (rappelling) মতো দুঃসাহসিক কার্যকলাপের সুযোগ করে Pelorus Travel।
৫. আন্টার্কটিকায় স্কুবা ডাইভিং (Scuba Diving):
অররা এক্সপেডিশনস (Aurora Expeditions) আন্টার্কটিকায় (Antarctica) স্কুবা ডাইভিংয়ের (scuba diving) সুযোগ নিয়ে এসেছে।
বরফের নিচে বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণী, যেমন—স্পাইডার ক্র্যাব, প্রবাল এবং বিশাল আকারের শৈবাল দেখা যায়।
৬. পেরুতে বন্য পরিবেশে টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ (Going off the Grid):
ব্ল্যাক টমেটো (Black Tomato) পেরুর (Peru) পার্বত্য অঞ্চলে বন্য পরিবেশে টিকে থাকার মতো দুঃসাহসিক ভ্রমণের আয়োজন করে।
এখানে পর্যটকদের একটি মানচিত্র ও কম্পাস (compass) দিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে হয়।
এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং ভ্রমণগুলো নিঃসন্দেহে ব্যয়বহুল।
তবে, যারা নিজেদের সীমানা অতিক্রম করতে চান এবং প্রকৃতির মাঝে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে আগ্রহী, তাদের জন্য এই ধরনের ভ্রমণ একটি অসাধারণ সুযোগ।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার