**আমেরিকার সুইজারল্যান্ডে: কলোরাডোর পার্বত্য অঞ্চলে এক দুঃসাহসিক হাইকিং অভিযান**
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে ভরপুর কলোরাডোর সান জুয়ান পর্বতমালা, যা ‘আমেরিকার সুইজারল্যান্ড’ নামেও পরিচিত। এখানকার রুক্ষ, উঁচু পর্বতশৃঙ্গ আর গভীর উপত্যকা ট্রেকিং এবং হাইকিং-এর জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য।
সম্প্রতি, এই অঞ্চলের মনোরম দৃশ্য আর দুর্গম পথে ৫ দিনের এক হাইকিং অভিযানের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছে একটি সংবাদ প্রতিবেদন।
এই হাইকিং যাত্রা ছিল প্রায় ৩৫ মাইলের, যেখানে অভিযাত্রীরা এক কুটির থেকে আরেক কুটিরে হেঁটেছেন। এই ধরনের ‘হুট-টু-হুট’ হাইকিং-এর ধারণাটি বাংলাদেশে খুব পরিচিত না হলেও, এর অর্থ হলো – দিনের শেষে আরামদায়ক কোনো আশ্রয়ে বিশ্রাম নেওয়া, যেখানে রাতের খাবারের ব্যবস্থাও থাকে।
আমাদের দেশের পার্বত্য অঞ্চলের ট্রেকিং-এর সময় যেমন স্থানীয় গেস্ট হাউজগুলোতে থাকার ব্যবস্থা থাকে, অনেকটা তেমনই।
অভিযানটি শুরু হয়েছিল কলোরাডোর আউরি শহর থেকে, যা এই অঞ্চলের হাইকিং-এর জন্য একটি পরিচিত স্থান। সান জুয়ান মাউন্টেন গাইডস নামক একটি স্থানীয় সংস্থা এই অভিযানের আয়োজন করে।
এই সংস্থাটি ১৯৮৬ সাল থেকে হাইকিং, স্কিইং এবং ক্লাইম্বিং-এর মতো বিভিন্ন ভ্রমণের ব্যবস্থা করে আসছে। এই অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন বিভিন্ন পেশা ও বয়সের মানুষ।
যাত্রাপথে প্রকৃতির নানা রূপ প্রত্যক্ষ করেছেন অভিযাত্রীরা। কখনো তারা সম্মুখীন হয়েছেন অপ্রত্যাশিত আবহাওয়ার, যেমন – তীব্র বাতাস আর বৃষ্টির মধ্যে আশ্রয় নিতে হয়েছিল, আবার কখনো ঝলমলে রোদ আর বুনো ফুলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে মুগ্ধ হয়েছেন।
এখানকার ১৪,০০০ ফুটের বেশি উচ্চতার পর্বতশৃঙ্গগুলো আর গভীর উপত্যকাগুলো যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের সাথে এর তুলনা করলে, সান জুয়ানের উচ্চতা অনেক বেশি এবং দৃশ্যপট আরও অনেক বেশি বিস্তৃত ও দুর্গম।
অভিযানের সময় অভিযাত্রীরা বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর দেখা পেয়েছেন, যেমন – হরিণের পাল, বিভিন্ন ধরনের পাখি। এখানকার স্থানীয় উদ্ভিদ আর ফুলের বৈচিত্র্যও ছিল অসাধারণ।
দিনের শেষে অভিযাত্রীরা বিশ্রাম নিতেন বিভিন্ন কুটিরে। ‘ওপাস হাট’ নামক একটি কুটির ছিল ১১,৬০০ ফুট উচ্চতায়, যেখানে ছিল আধুনিক সব সুবিধা। এছাড়া ‘রেড মাউন্টেন আল্পাইন লজ’-এর মতো কুটিরগুলোতেও তারা রাত কাটিয়েছেন।
সেখানে আড্ডা, খেলাধুলা আর গল্পে মেতে উঠতেন সবাই।
অভিযানের শেষ দিনে, অভিযাত্রীরা ‘মাউন্ট হেডেন ব্যাককান্ট্রি লজ’-এ পৌঁছান। এই সময়ে তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছিল এক গভীর বন্ধুত্ব।
এই হাইকিং যেন ছিল প্রকৃতির মাঝে কয়েক দিনের জন্য এক ভিন্ন জগৎ-এ প্রবেশ করা, যেখানে সবাই মিলে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছেন।
এই ধরনের ৪ রাতের একটি হাইকিং-এর জন্য খরচ হয় প্রায় ২,২৯৯ মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৫০,০০০ টাকা)।
তথ্যসূত্র: ট্রাভেল + লেজার