এক যুগ আগের বন্ধুত্ব, আর তার রেশ ধরেই আমেরিকার এক প্রান্ত জুড়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতার সাক্ষী হওয়া। দুজনের শৈশবের ঘোড়ার প্রতি ভালোবাসাই যেন এই অভিযানের মূল ভিত্তি ছিল।
বন্ধুদের এই দল, যারা ‘হর্স গার্ল’ নামেই পরিচিত, তারা আমেরিকার একটি বিশাল প্রান্তরের বুকে, প্রায় ১৩০ কিলোমিটার পথ জুড়ে ঘোড়ার পিঠে চড়ে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতার সাক্ষী থেকেছেন।
এই ভ্রমণের শুরুটা হয়েছিল এক যুগ আগের বন্ধুত্বকে আরও একবার ঝালিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে। ছোটবেলার দুই বন্ধু ভিক্টোরিয়া আর ক্যারি, দুজনেই ঘোড়ার প্রতি ভালোবাসা থেকে একসঙ্গে সময় কাটাতেন।
স্কুলের খেলার মাঠে চেয়ারের উপরে বসে ঘোড়ার সওয়ার হওয়ার ভান করা থেকে শুরু করে সত্যিকারের ঘোড়ার সঙ্গে সময় কাটানো—তাদের শৈশব ছিল ঘোড়াকে কেন্দ্র করে।
কৈশোরের শুরুতে তারা পেনসিলভেনিয়ার একটি খামারে ঘোড়ার দেখাশোনা করতেন। সেই সময়টা ছিল তাদের কাছে এক স্বর্গরাজ্যের মতো।
বছর কয়েক আগে, ভিক্টোরিয়া যখন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে এই বিশেষ ভ্রমণের প্রস্তাব দেয়, ক্যারি এক মুহূর্তও দেরি করেননি। আমেরিকার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত একটি পরিবার-নিয়ন্ত্রিত ‘সিলভার স্পার র্যাঞ্চ’-এ এই ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
এখানে ঘোড়া ছোটানো, তাদের দেখাশোনা করা—সবকিছুই যেন এক অন্য জগৎ। এই র্যাঞ্চের মালিক এলটি টমলিনসন এবং তাঁর স্ত্রী লানা।
তাঁদের ছেলে ড্যাক্স টমলিনসন এবং তাঁর স্ত্রী কাইলি এই র্যাঞ্চের কাজকর্ম দেখাশোনা করেন।
ভ্রমণের মূল আকর্ষণ ছিল ঘোড়া ছোটানো। পর্যটকদের প্রশিক্ষিত ঘোড়ার পিঠে চড়ে অ trainingপ্রাপ্ত ঘোড়াদের প্রশিক্ষণে সাহায্য করা হতো।
বিশাল প্রান্তরে ঘোড়ার পাল নিয়ে ছুটে চলা, বনের পথ ধরে ঘোড়া চালানো—সবকিছুই ছিল এই অভিজ্ঞতার অংশ। ঘোড়ারা যাতে সহজে পথ চলতে পারে, তার জন্য তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো।
যারা এই ভ্রমণে অংশ নিতেন, তাঁদের ঘোড়া চালানোর অভিজ্ঞতা থাকতে হতো, সেই সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতাও জরুরি ছিল।
ভ্রমণের প্রথম দিন, ১৩ জন নারীর একটি দল ঘোড়ার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার জন্য প্রায় ৬ ঘণ্টা ঘোড়া চালিয়েছিলেন। এই দলে ছিলেন একজন পুরুষও, যিনি কানাডার একজন ইলেক্ট্রিশিয়ান ছিলেন।
পরের তিন দিন তাঁরা কঠিন পথ পাড়ি দিয়েছেন। রাতে তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা ছিল, আবার মাঝে মাঝে ঝর্ণার জলে স্নানও করতে হয়েছে।
রাতের বেলা ঘোড়ার ঘাস খাওয়ার শব্দ পাওয়া যেত। এই সময়ে প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয়েছিল।
দিনের বেলা, তাঁরা বিশ্রাম নেওয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে থামতেন। সেখানে সবাই মিলে দুপুরের খাবার খেতেন।
এই সময়ে কুকুরের দল খাবারের জন্য তাঁদের আশেপাশে ঘোরাঘুরি করত। একবার এক গাইড তাঁর ঘোড়ার চাবুক দিয়ে একটি র্যাটলস্নেক মেরে ফেলেন এবং সবাইকে সেটি দেখতে বলেন।
ভ্রমণের শেষ দিনে, ক্যারি, ভিক্টোরিয়া এবং আরও কয়েকজন নারী ভুল করে একটি কাঁচা রাস্তা ধরে ঘোড়া ছুটিয়ে দেন। তাঁরা এতটাই আনন্দে ছিলেন যে, দলের বাকি ঘোড়াগুলো থেকে বেশ দূরে চলে গিয়েছিলেন।
পরে তাঁদের গাইড এসে তাঁদের দলের সঙ্গে যোগ দিতে বলেন। অবশেষে, হাসি-ঠাট্টার মধ্যে তাঁরা তাঁদের যাত্রা শেষ করেন।
এই ভ্রমণের মাধ্যমে বন্ধুত্বের উদযাপন এবং প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার এক দারুণ সুযোগ তৈরি হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল এন্ড লেজার