বরফের গভীরে লুকানো ১৪,০০০ বছর আগের ‘শাবক’, আসলে কি তারা কুকুর ছিল না? নতুন গবেষণা বলছে অন্য কথা।
উত্তর সাইবেরিয়ার বরফের মধ্যে সংরক্ষিত দুটি “শাবক”-এর দেহাবশেষ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা গবেষণা শেষে বিজ্ঞানীরা নতুন তথ্য দিয়েছেন। এতদিন ধারণা করা হতো, এরা সম্ভবত আদিম যুগের পোষা কুকুর অথবা মানুষের কাছাকাছি বসবাস করা কোনো নেকড়ে প্রজাতির প্রাণী।
কিন্তু নতুন বিশ্লেষণ বলছে অন্য কথা। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরা আসলে নেকড়ের শাবক ছিল, যাদের বয়স ছিল মাত্র দুই মাস।
গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তাদের ডিএনএ বিশ্লেষণ এবং হাড়, দাঁত ও নরম কলার রাসায়নিক উপাদান পরীক্ষা করার পর। গবেষণাটি ‘কোয়াটারনারি রিসার্চ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
জানা গেছে, এই শাবক দুটি সম্ভবত বোন ছিল। তাদের কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, যা ইঙ্গিত করে যে প্রায় ১৪,০০০ বছর আগে ভূমিধসের কারণে তাদের গুহা ধসে পড়ার ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছিল।
গবেষণায় আরও জানা গেছে, শাবক দুটির পেটে ছিল তাদের শেষ আহারের কিছু অংশ। এর মধ্যে ছিল লোমশ গণ্ডারের মাংস এবং একটি ছোট পাখির পালক।
তাদের খাদ্যাভ্যাস বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা সেই সময়ের প্রাণীদের জীবনযাত্রা সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারছেন।
গবেষণা দলের প্রধান, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ডক্টরাল শিক্ষার্থী অ্যান ক্যাথরিন উইবার্গ রুংগে বলেন, “এই সময়ের দুটি বোনের এত ভালোভাবে সংরক্ষিত দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়াটা সত্যিই অসাধারণ। আমরা এখন তাদের জীবনযাত্রার অনেক কিছুই জানতে পারছি, এমনকি তাদের শেষ খাবার সম্পর্কেও।
এই আবিষ্কারের ফলে বিজ্ঞানীরা সেই সময়ের পরিবেশ কেমন ছিল, কীভাবে প্রাণীগুলো জীবন যাপন করত, তা জানতে পারছেন। একইসঙ্গে, ১৪,০০০ বছর আগের নেকড়ে এবং আজকের দিনের নেকড়েদের মধ্যে কতটা মিল ছিল, সে সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
গবেষকরা আরও জানিয়েছেন, এই শাবকগুলি মাংস এবং উদ্ভিদ উভয়ই খেত। লোমশ গণ্ডার তাদের শিকারের একটি অংশ ছিল, যার প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের পেটে থাকা গণ্ডারের চামড়ার মাধ্যমে।
এই গবেষণার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীরা কুকুর প্রজাতি কীভাবে মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছিল, সেই সম্পর্কে নতুন তথ্য জানার চেষ্টা করছেন। একটি ধারণা হলো, নেকড়েরা মানুষের কাছাকাছি বসবাস করত এবং তাদের ফেলে যাওয়া খাবার খেত।
অন্য একটি ধারণা হলো, মানুষ সক্রিয়ভাবে নেকড়েদের ধরে লালন-পালন করত, যার ফলে তারা বন্য প্রজাতি থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং আদিম কুকুরের জন্ম হয়।
ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্বের সিনিয়র প্রভাষক ড. নাথান ওয়েলস বলেছেন, “কুকুরের উৎপত্তির বিষয়ে কথা বলার সময়, আমরা প্রথম গৃহপালিত প্রাণী সম্পর্কে কথা বলি। তাই বিজ্ঞানীদের কাছে এর প্রমাণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও জানান, শাবকগুলি তাদের নিজস্ব জীবন যাপন করত এবং সম্ভবত তাদের আরও ভাইবোন ছিল, যারা হয়তো সেই দুর্ঘটনায় মারা যায়নি।
এই গবেষণা আমাদের প্রাচীন প্রাণীদের জীবন এবং বিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্র দেয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন