ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরায়েলের হামলার অভিযোগ, উত্তেজনা বাড়ছে মধ্যপ্রাচ্যে। সম্প্রতি, ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ইসরায়েল তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের বিতর্কিত পারমাণবিক কর্মসূচিকে ব্যাহত করা।
অভিযোগ উঠেছে, ইসরায়েল নাটানজ, ইসফাহান এবং ফোরদো-তে অবস্থিত পারমাণবিক কেন্দ্রগুলোতে আঘাত হেনেছে। একই সঙ্গে, তারা পারমাণবিক গবেষণা ও উন্নয়ন-এর সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীকে টার্গেট করেছে।
তবে, এই হামলার ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নাটানজ এবং ইসফাহানে চালানো হামলায় কেন্দ্রগুলোর উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে, ইরান হামলার কথা স্বীকার করলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে দেখিয়েছে।
তারা শুধুমাত্র ৯ জন বিশেষজ্ঞের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে।
এই ঘটনার পর ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে এসে পৌঁছেছি, যেখানে ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা থেকে বিরত রাখতে না পারলে, তা আমাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “গত দেড় বছরে আমরা ইরানের সহযোগী শক্তিদের মোকাবেলা করেছি, তবে এবার আমরা সরাসরি ‘সাপের মাথা’-র সঙ্গেই যুদ্ধ করছি।
ইরান অবশ্য তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করছে। আসুন, এই তিনটি স্থাপনার ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:
নাটানজ:
প্রাথমিক মূল্যায়নে জানা গেছে, নাটানজ পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা অত্যন্ত কার্যকর হয়েছে। বাইরের কাঠামোর সামান্য ক্ষতির বাইরে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত সেন্ট্রিফিউজগুলো যে স্থানে রাখা ছিল, সেখানকার বিদ্যুত্ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানা যায়, “পুরোমাত্রায় আক্রমণ চালানো হয়েছে।” স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা গেছে, নাটানজ-এর বিভিন্ন স্থানে কালো ধোঁয়া উড়ছে।
এই কেন্দ্রে বিদ্যুত্ সরবরাহের প্রধান ভবন, জরুরি এবং ব্যাকআপ জেনারেটরগুলোও ধ্বংস হয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (IAEA) জানিয়েছে, কেন্দ্রের বাইরের তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে, ভেতরের কিছু অংশে তেজস্ক্রিয় ও রাসায়নিক দূষণ হয়েছে, যা নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
ইসফাহান:
ইসফাহান পারমাণবিক কেন্দ্রে ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যায়নি। ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে এই হামলার প্রভাব নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে।
ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি জানিয়েছেন, এই কেন্দ্রে সীমিত ক্ষতি হয়েছে এবং সেখানকার সরঞ্জাম সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল।
একটি শেডে আগুন লেগেছিল, তবে দূষণের কোনো ঝুঁকি নেই। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এই কেন্দ্রে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে।
জানা যায়, এই কেন্দ্রটি চীনের সহায়তায় ১৯৮৪ সালে তৈরি করা হয়েছিল। এখানে প্রায় ৩ হাজার বিজ্ঞানী কাজ করেন এবং এটিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির কেন্দ্র হিসেবে সন্দেহ করা হয়।
ফোরদো:
ফোরদো জ্বালানি সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত। এখানে উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য উন্নত সেন্ট্রিফিউজ ব্যবহার করা হয়।
ইসরায়েল এই কেন্দ্রটিতেও আঘাত হেনেছিল, তবে আইএইএ জানিয়েছে, এর কোনো ক্ষতি হয়নি। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম প্রেস টিভি জানিয়েছে, একটি ইসরায়েলি ড্রোনকে ভূপাতিত করা হয়েছে।
২০২৩ সালে, আইএইএ নিশ্চিত করেছে যে ফোরদোতে ৮৩.৭% পর্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের কণা পাওয়া গেছে, যা পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০%-এর কাছাকাছি।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হওয়ায়, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ঘটনার ওপর গভীর দৃষ্টি রাখছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন