বিশ্বের বৃহত্তম নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবন: আলাস্কার এক অনবদ্য গন্তব্য।
আলাস্কার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত টঙ্গাস ন্যাশনাল ফরেস্ট, যা শুধু আমেরিকার বৃহত্তম বনভূমিই নয়, বরং এটি পৃথিবীর বৃহত্তম নাতিশীতোষ্ণ বৃষ্টিবন হিসেবেও সুপরিচিত। বিশাল বরফক্ষেত্র, গভীর সমুদ্রপথ আর বিচিত্র বন্যপ্রাণীর এক অসাধারণ মিলনক্ষেত্র হলো এই বনভূমি।
যারা প্রকৃতির নীরবতা ও বন্য জীবনের সাক্ষী হতে চান, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
প্রায় ১ কোটি ৭০ লক্ষ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বনভূমি, যা আকারে বাংলাদেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান। এখানকার প্রধান আকর্ষণগুলো হলো : অসংখ্য হিমবাহ, প্রায় ১,১০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত আলেকজান্ডার দ্বীপপুঞ্জ, এবং গভীর সমুদ্রপথ বা ফিয়র্ড (fjord)।
এখানকার পাহাড় ও গভীর জলের মাঝে ছোট ছোট জনপদগুলো যেন প্রকৃতির এক একটি নীরব সাক্ষী।
টঙ্গাস ন্যাশনাল ফরেস্ট শুধু বনের বিশালতার জন্যই বিখ্যাত নয়, বরং জীববৈচিত্র্যের দিক থেকেও এর জুড়ি মেলা ভার।
এখানে দেখা মেলে নানান ধরনের বন্যপ্রাণীর, যেমন: ভালুক, মায়া হরিণ, নেকড়ে, ঈগল, এবং উড়ন্ত কাঠবিড়ালি।
এছাড়াও, বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, তিমি, সিল, এবং সি-অটারও এখানে অবাধে ঘুরে বেড়ায়।
এখানকার আদিবাসী মানুষের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো টিংলিট, হাইডা এবং সিমশিয়ান সম্প্রদায়, যারা বহু বছর ধরে এই অঞ্চলে বসবাস করে আসছেন।
এই বনের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য জুনো শহর থেকে ভ্রমণ শুরু করা যেতে পারে। এছাড়া, কেচIKান অথবা সিটকা শহর থেকেও এখানে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে।
সাধারণত, পর্যটকেরা ক্রুজ জাহাজে করে এখানে আসেন।
এখানে বন ভ্রমণের জন্য হাইকিং, ফিশিং, অথবা জিওলাইন-এর মতো বিভিন্ন কার্যকলাপের সুযোগ রয়েছে।
ভ্রমণের আগে কিছু জরুরি বিষয় জেনে রাখা ভালো। এখানকার আবহাওয়া বেশ ঠান্ডা থাকে, তাই লেয়ার করে পোশাক পরিধান করা উচিত।
এছাড়াও, বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় রেইনকোট সঙ্গে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। সেলুলার নেটওয়ার্ক সব জায়গায় নাও পাওয়া যেতে পারে, তাই আপনার গন্তব্য সম্পর্কে পরিবারের সদস্যদের জানিয়ে রাখা ভালো।
এখানে ভ্রমণের সেরা সময় হলো গ্রীষ্মকাল, যখন তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৭০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৪ থেকে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এর মধ্যে থাকে।
শীতকালে রাতের বেলা আলোর স্বল্পতা দেখা যায়।
নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সিটকা হোয়েলফেস্ট-এ যোগ দিয়ে স্থানীয় সামুদ্রিক জীবন সম্পর্কে জানার সুযোগ রয়েছে।
যেভাবে যাবেন:
সাধারণত, পর্যটকেরা ক্রুজ জাহাজে করে এখানে আসেন।
এছাড়াও, জুনো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (JNU) অথবা কেচIKান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (KTN) বিমানে করে এসে, পরে সি-প্লেন অথবা নৌকায় করে বনের গভীরে যাওয়া যায়।
এখানে ঘোরার মতো অনেক সুন্দর জায়গা রয়েছে। ভালুক সহ বন্যপ্রাণী দেখার জন্য এখানে কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে, যেখানে বন বিভাগ পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
এছাড়াও, জলপথে ভ্রমণেরও সুযোগ আছে, যেখানে তিমি ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়। হাইকিং এবং ট্রেকিং-এর জন্যেও এখানে অনেক পথ বিদ্যমান।
আবাসন:
এখানে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের বিকল্প রয়েছে।
ব্যাককান্ট্রি লজ থেকে শুরু করে আধুনিক হোটেল—সব ধরনের সুবিধা এখানে বিদ্যমান।
খাবার:
এখানে আসলে আলাস্কার বিখ্যাত কিং ক্র্যাব, স্থানীয় সি-ফুড এবং হস্তনির্মিত পিৎজার স্বাদ নিতে পারেন।
টঙ্গাস ন্যাশনাল ফরেস্ট যেন প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি। যারা প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এটি একটি অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
তথ্য সূত্র: Travel and Leisure