আমার ছেলে, আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের থেকে আলাদা ছিল। শারীরিক কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল, যা ওকে সবসময় আগলে রাখতে হত। সেই ছেলেকে ঘিরেই বাবার জীবন, আর সেই বাবার কলম থেকেই জন্ম নিল এক নতুন জগৎ।
গল্পটা এমনই, যেখানে একজন বাবার ভালোবাসার গভীরতা আর ছেলের প্রতি দায়বদ্ধতা মিলেমিশে তৈরি হয়েছে এক অসাধারণ অনুপ্রেরণা।
ছেলেটির নাম অ্যালেক্স, আর বাবা হলেন লেখক জেমস পন্টি। পেশাগত জীবনে জেমস ছিলেন টেলিভিশন প্রযোজক, কিন্তু অ্যালেক্সের জন্মের পরেই জীবনের মোড় ঘুরে যায়।
অটিজম-এ আক্রান্ত অ্যালেক্সের জন্য প্রয়োজন ছিল বিশেষ যত্ন আর ভালোবাসার। সেই ভালোবাসাই জেমসকে ধীরে ধীরে একজন লেখকের আসনে বসায়।
ছোটবেলায় অ্যালেক্সের কিছু সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। কথা বলতে সমস্যা হত, খেলনা নিয়ে খেলতে চাইত না, এমনকি নিজের নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দিত না। বাবা-মা হিসেবে তাঁদের উদ্বেগ বাড়ে।
এরপর চিকিৎসকদের পরামর্শে জানা যায়, অ্যালেক্স অটিজমের শিকার। সেই সময় বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে সচেতনতা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। চিকিৎসার খরচ বহন করতে গিয়ে অনেক সময় তাঁরা আর্থিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন।
অ্যালেক্সের দেখাশোনার জন্য জেমসকে তাঁর ক্যারিয়ারে পরিবর্তন আনতে হয়। টেলিভিশনের কাজ ছেড়ে তিনি শিশুদের জন্য লিখতে শুরু করেন।
অ্যালেক্সের স্কুলের সময়টাতে তিনি লিখতেন, আর রাতে অ্যালেক্সের মা, যিনি একজন শিক্ষক, ছেলেকে দেখাশোনা করতেন। কঠিন পরিস্থিতি, কিন্তু ভালোবাসার বাঁধনে তাঁরা ছিলেন অবিচল।
অ্যালেক্সের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের চিন্তা বাড়ে, কারণ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট বয়সের পর বিদ্যালয়ে থাকার সুযোগ থাকে না।
এই পরিস্থিতিতে জেমস সিদ্ধান্ত নেন, ছেলেকে দেখাশোনা করার জন্য তিনি চাকরি ছেড়ে দেবেন এবং লেখক হিসেবে নতুন করে জীবন শুরু করবেন।
গভীর রাতে, যখন অ্যালেক্স ঘুমিয়ে যেত, জেমস লিখতে বসতেন।
এভাবেই শুরু হয় তাঁর লেখক জীবন। “ডেড সিটি” (Dead City) সিরিজ লেখার সময় অ্যালেক্স হাসপাতালে ভর্তি ছিল।
হাসপাতালের মেঝেতে বসে তিনি বই লিখতেন, আর অ্যালেক্সের পাশে থাকতেন। অ্যালেক্সের অসুস্থতা, তাঁর প্রতি জেমসের ভালোবাসা—এগুলোই যেন জেমসের লেখার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।
এরপর একে একে প্রকাশিত হয় তাঁর আরও কয়েকটি বই, যা পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করে।
কিন্তু নিয়তির পরিহাস! ২২ বছর বয়সে অ্যালেক্সের জীবনাবসান হয়। প্রিয় সন্তানের মৃত্যুতে জেমস ভেঙে পড়েন।
লেখার জগৎ থেকে দূরে চলে যান তিনি। কিন্তু অ্যালেক্সের স্মৃতি তাঁকে আবার লিখতে উৎসাহিত করে। তিনি অনুভব করেন, অ্যালেক্স তাঁর লেখায় বেঁচে আছে।
আজও জেমস লেখেন, আর তাঁর বইগুলো অনেক পরিবারের কাছে আশ্রয়স্থল। এমন অনেক বাবা-মা আছেন, যাঁরা তাঁদের অসুস্থ সন্তানের সাথে জেমসের বই পড়েন।
তাঁদের চোখে জল আসে, কিন্তু তাঁরা জানেন, অ্যালেক্সের মাধ্যমেই তাঁরা শক্তি খুঁজে পান। জেমসের ভাষায়, অ্যালেক্স তাঁর অনুপ্রেরণা, তাঁর “নর্থ স্টার”।
তথ্য সূত্র: পিপল