নিউ ইয়র্কের এক সফল ‘ম্যাচমেকার’-এর চোখে ‘মেটেরিয়ালিস্টস’। প্রেমের সন্ধানে মানুষের পথচলা নিয়ে তৈরি সিনেমা ‘মেটেরিয়ালিস্টস’।
ছবিতে ডেকাটা জনসন অভিনয় করেছেন লুসি নামের একজন ম্যাচমেকারের চরিত্রে, যিনি ম্যানহাটনে ধনী ব্যক্তিদের জন্য সঙ্গী খুঁজে দেন। পেশাগত জীবনে সফল হলেও, ব্যক্তিগত জীবনে ভালোবাসার প্রতি এক ধরনের হতাশায় ভুগেন তিনি।
সিনেমার গল্পে লুসিকে কেন্দ্র করে একটি ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়, যেখানে পেদ্রো পাসকাল এবং ক্রিস ইভান্সের মতো অভিনেতাদের দেখা যায়। তবে সিনেমাটি মূলত আধুনিক ডেটিং এবং ম্যাচমেকিংয়ের ধারণা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।
প্রশ্নগুলো হলো—বক্স চেক করা এবং অ্যালগরিদম সাজানোর মাধ্যমে কি ভালোবাসার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া সম্ভব?
এবার আসা যাক বাস্তবতার প্রশ্নে। মারিয়া অ্যাভজিটাইডিস, যিনি নিউইয়র্ক সিটিতে বসবাস করেন এবং চতুর্থ প্রজন্মের একজন পেশাদার ম্যাচমেকার, ‘মেটেরিয়ালিস্টস’ সিনেমাটি দেখেছেন। সিনেমার গল্পে তাঁর পেশা যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, তা নিয়ে তাঁর কিছু ভিন্নমত রয়েছে।
“আমি ছবিতে নিজেকে খুঁজে পাই না,” তিনি জানান। অ্যাভজিটাইডিস আরও বলেন, “আমি কয়েকজন ম্যাচমেকারকে সতর্ক করেছিলাম—সিনেমাটি নিয়ে খুব বেশি মাতামাতি করো না।”
২০২৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘পাস্ট লাইভস’ সিনেমার জন্য অস্কারে মনোনয়ন পাওয়া পরিচালক সেলিন সং, ১০ বছর আগে একটি বৃহৎ ম্যাচমেকিং সার্ভিস ‘টকফাই’-তে কাজ করার সময় এই সিনেমার ধারণা পান। পরিচালক জানান, সেই সময়ে তিনি মানুষের সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন, যা অন্য কোনো সময়ে শেখা সম্ভব হয়নি। তাঁর মতে, এই কাজটি অনেকটা “শেয়ার বাজারের ব্যবসায়ীর” মতো।
সিনেমায় দেখানো হয়েছে, ডেটিংয়ের নামে মানুষ কিভাবে একে অপরের মানবিকতাকে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করে। অ্যাভজিটাইডিস ‘আগাপে’ নামে একটি বুটিক ম্যাচমেকিং কোম্পানি চালান। তাঁর অধীনে একসঙ্গে প্রায় ১৫ জন ক্লায়েন্ট থাকেন।
তাঁর ক্যারিয়ারে তিনি কয়েক হাজার বিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি ‘আস্ক আ ম্যাচমেকার: ম্যাচমেকার মারিয়াস নো-ননসেন্স গাইড টু ফাইন্ডিং লাভ’ নামে একটি বইও লিখেছেন। এবার জেনে নেওয়া যাক, বাস্তবতার নিরিখে ‘মেটেরিয়ালিস্টস’ সিনেমাটি ম্যাচমেকিং জগৎকে কতটা ভালোভাবে উপস্থাপন করেছে।
সিনেমাতে লুসির চরিত্রটি বছরে প্রায় ৮০,০০০ ডলার আয় করেন বলে দেখানো হয়েছে। অ্যাভজিটাইডিসের মতে, একজন ম্যাচমেকারের কর্মচারী হিসেবে এই বেতন সঠিক। তবে ক্লায়েন্ট পাওয়ার জন্য লুসিকে রাস্তায় নেমে আসা এবং অপরিচিতদের কাছে ব্যবসার কার্ড বিতরণ করতে দেখা যায়।
এই বিষয়ে অ্যাভজিটাইডিস বলেন, “সম্ভবত ২০০৮ সালের আগে এমনটা হতো। তবে আমি সবসময় ক্লায়েন্টদের আমার কাছে আসার সুযোগ দিয়েছি। ম্যাচমেকারদের সম্পর্কে একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে, শুধুমাত্র হতাশ মানুষেরাই তাঁদের সাহায্য নেন। তবে এটা সত্যি নয়। আমি সবসময় ইনবাউন্ড মার্কেটিং পদ্ধতি অনুসরণ করি।”
সিনেমায় ম্যাচমেকিং অফিসের সেটআপ কেমন, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এটা তো সিনেমার জগৎ। আমার অফিস বহু বছর ধরে এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ৫৯ তলায় ছিল। তবে মহামারীর কারণে আমরা সেটি ছেড়ে দিয়েছি। এখন ক্লায়েন্টরা অফিসে দেখা করতে চান না, তাঁরা বাইরে অথবা জুম মিটিংয়ে দেখা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
লুসিকে একটি ক্যাফেতে ব্যক্তিগত কথোপকথন করতে দেখা যায়, যা বাস্তবতার থেকে অনেক দূরে।
সিনেমাতে ক্লায়েন্টদের বিয়েতে লুসিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এমনকি, বিয়ের আগে নার্ভাস কনেদের সঙ্গেও তাঁকে কথা বলতে দেখা যায়। অ্যাভজিটাইডিস জানান, তিনি ক্লায়েন্টদের বিয়ের অনুষ্ঠানে খুব কমই যান।
তিনি বলেন, “আমি তাদের প্রথম ডেটিংয়ের দিন থেকে বিয়ের দিন পর্যন্ত তাদের সঙ্গে থাকি না। আমি হয়তো কয়েকটি বিয়েতে গিয়েছি। তবে আমি কখনোই মনে করি না যে, আমি তাদের জীবন পরিবর্তন করেছি। “
সিনেমায় ক্লায়েন্টদের সঙ্গে ম্যাচমেকারদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হতে দেখা যায়। অ্যাভজিটাইডিস জানান, তাঁর পেশাগত জীবনে তিনি সবসময় ক্লায়েন্টদের সঙ্গে পেশাদার সম্পর্ক বজায় রাখেন।
সিনেমায় দেখানো হয়েছে, লুসির ক্লায়েন্টদের মধ্যে কিছু মানুষ ডেটিংয়ের বিষয়ে হতাশ। তাঁরা চান, দ্রুত তাঁদের জন্য একজন উপযুক্ত জীবনসঙ্গী খুঁজে দেওয়া হোক। অ্যাভজিটাইডিসের মতে, তাঁর ৮০ শতাংশ ক্লায়েন্ট ব্যস্ত নিউ ইয়র্কবাসী, যাঁদের ডেটিং অ্যাপগুলোতে সময় কাটানোর সুযোগ নেই।
তাঁদের মধ্যে গোল্ডম্যান বা ব্ল্যাকরকের মতো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি, ব্যবসায়ী অথবা উদ্যোক্তা রয়েছেন। তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক বা ব্যক্তিগত শেফের মতোই একজন ম্যাচমেকার নিয়োগ করেন।
সিনেমাতে লুসির একজন ক্লায়েন্টকে ডেটিংয়ের সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হতে দেখা যায়। এই বিষয়ে অ্যাভজিটাইডিস বলেন, বাস্তবে তিনি এমন ঘটনার শিকার হননি। তিনি আরও জানান, “আমি আমার ১৭ বছরের ক্যারিয়ারে খারাপ আচরণের জন্য দুজন ক্লায়েন্টকে বরখাস্ত করেছি। তবে তাঁরা তাঁদের ভুল স্বীকার করেছিলেন।
আমি আমার কয়েকজন সহকর্মীর কাছেও শুনেছি, এমন ঘটনা তাঁদের সঙ্গেও ঘটেনি।”
সিনেমায় একটি দৃশ্যে লুসিকে আবেগপ্রবণ হয়ে বাথরুমে গিয়ে তাঁর নোটবুক দেখতে দেখা যায়, যেখানে ক্লায়েন্টের সম্পর্কে কিছু তথ্য লেখা ছিল। অ্যাভজিটাইডিসের মতে, ক্লায়েন্ট সম্পর্কে এত কম তথ্য লেখাটা একজন ম্যাচমেকারের জন্য গুরুতর অপরাধ।
তিনি বলেন, “আমি যদি একজন কর্মচারী নিয়োগ করতাম, তাহলে এমনটা দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে বরখাস্ত করতাম।”
পরিশেষে, অ্যাভজিটাইডিস মনে করেন, ম্যাচমেকারদের ভালোবাসায় বিশ্বাস রাখতে হবে। ক্লায়েন্টদের সবসময় ভালো সম্পর্ক উপভোগ করতে উৎসাহিত করতে হবে।
তথ্য সূত্র: পিপল