শিরোনাম: উপহারের অব্যবহৃত জিনিস, বৃদ্ধাশ্রমে ভালোবাসার আলো: এক মার্কিন নারীর মানবিক উদ্যোগ
২০০১ সালের এক দুপুরে, আমেরিকার শিকাগো শহরের একটি ছোট অ্যাপার্টমেন্টে বসে জেনিফার মোলস্কির মাথায় একটি নতুন চিন্তা আসে। চারপাশে তখন বন্ধুদের দেওয়া অসংখ্য উপহারে ভরা, যেগুলোর কোনোটিই তার ব্যবহারের সুযোগ হয়নি।
স্কার্ফ থেকে শুরু করে ফুলের তোড়া, আরো কত কি! জিনিসগুলো হয়তো আলমারিতে, না হয় স্টোরেজে, নয়তো খাটের নিচে—এভাবেই জমতে শুরু করে।
জিনিসগুলো ব্যবহার করতে না পারার গ্লানি অনুভব করছিলেন জেনিফার। তিনি উপলব্ধি করলেন, তার কাছে অব্যবহৃত থাকা এই উপহারগুলো অন্যের জীবনে আনন্দ যোগাতে পারে।
তিনি একজন সমাজকর্মী ছিলেন, তাই জানতেন, তার সম্প্রদায়ে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা এইসব উপহার পেয়ে খুশি হবেন। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম নেয় ‘লিভ ইট ফর লাভ’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থার।
গত ২৩ বছর ধরে, জেনিফার মোলস্কি তার এই সংস্থার মাধ্যমে উপহার পুনর্ব্যবহারের ধারণাটিকে সমাজে পরিচিত করেছেন। ফ্লোরিসমুরের ৫৫ বছর বয়সী এই বাসিন্দা বয়স্ক মানুষদের একাকীত্ব দূর করতে এবং তাদের মুখে হাসি ফোটাতে এইসব উপহার বিতরণ করেন।
শিকাগো অঞ্চলের সরকারি আবাসনে বসবাস করা প্রবীণ নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয় তার সংগ্রহ করা প্রায় ১০,০০০-এর বেশি অব্যবহৃত জিনিসপত্র। এর মধ্যে ছিল সুগন্ধি সাবান, পারফিউম, খেলনা, মেকআপ সামগ্রী এবং আরো অনেক কিছু।
জেনিফার বলেন, “এই প্রোগ্রামটি খুবই সাধারণ, আমি এবং আমার স্বামী মিলেই করি। কিন্তু এর প্রভাব অনেক গভীর। আমি এখনো ভুলতে পারি না, যখন একজন বৃদ্ধা তার পছন্দের লিপস্টিকটি বেছে নিয়ে বলেছিলেন, ‘আমি যেন বহু বছর পর আবার সুন্দরী হয়ে উঠলাম’। একটি সাধারণ লিপস্টিক কীভাবে একজন বৃদ্ধ মানুষের মনে আনন্দ যোগাতে পারে, তা সত্যিই অসাধারণ।”
শুরুটা হয়েছিল খুবই সাদাসিধেভাবে। জেনিফার তার অ্যাপার্টমেন্টের লন্ড্রি রুমের দরজার একটি বিজ্ঞপ্তি লাগিয়েছিলেন, যেখানে লেখা ছিল, “আপনার কি এমন কোনো উপহার আছে যা আপনি ব্যবহার করেন না? আসুন, ‘লিভ ইট ফর লাভ’-এর মাধ্যমে সেগুলো পুনর্ব্যবহার করি।”
স্থানীয় গণমাধ্যমে তার এই উদ্যোগের কথা প্রকাশিত হওয়ার পর, উপহার পুনর্ব্যবহারের এই ধারণা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। প্রতি বছর বড়দিনের ছুটির পরেই তিনি উপহার সংগ্রহ করা শুরু করেন এবং ভালোবাসা দিবস পর্যন্ত তা চলতে থাকে।
কারণ, এই সময়টাতে মানুষজন বিভিন্ন ধরনের চকলেট, খেলনা এবং ছোট ছোট উপহার সামগ্রী পেয়ে থাকে, যা বয়স্কদের জন্য দারুণ হতে পারে।
এই প্রকল্পের কয়েক বছর পর জেনিফার বুঝতে পারেন, তিনি সঠিক পথেই আছেন। এক বন্ধু তাকে এই কাজে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেন এবং উপহার দেন। জেনিফার যখন তার বাড়িতে গিয়ে উপহারের বাক্সটি সংগ্রহ করেন, তখন তিনি খুবই অবাক হন।
কারণ, সেই বাক্সে তিনি কয়েক মাস আগে বন্ধুকে দেওয়া একটি সুন্দর ফুলদানি দেখতে পান!
জেনিফার বলেন, “আমি হেসেছিলাম, কারণ আমার এই কাজটি করার মূল উদ্দেশ্য হলো, উপহারগুলোকে সঠিক ব্যবহার করা। আর আমি জানতাম, খুব শীঘ্রই কোনো বয়স্ক মানুষ এই সুন্দর ফুলদানিটি উপভোগ করতে পারবেন।”
বস্তুত, এর প্রমাণ পাওয়া যায়। ৬৯ বছর বয়সী জো ডিটজ নামের এক বৃদ্ধ, যিনি ভিক্টরি সেন্টারে থাকেন, জেনিফারের সংস্থা থেকে কিছু সোয়েটার, গরম চকোলেট এবং মগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, “এটা ভেবে চোখে জল আসে যে, পৃথিবীতে এমন মানুষও আছে যারা আমাদের জন্য কিছু করতে চায়, বিনিময়ে কিছুই আশা করে না। তারা শুধু তাদের হৃদয়ের উদারতা থেকেই এটা করে।”
তথ্য সূত্র: পিপল