দুরারোগ্য ব্যাধি, জীবনের কঠিন আঘাত, এমনকি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ—কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি ১৮ বছর বয়সী বেলা চ্যাম্বাসিসকে।
কানেকটিকাটের ইস্ট হ্যাভেন হাই স্কুলের ছাত্রী বেলা সম্প্রতি তার বিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে হেঁটে এসে নিজের ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এই সাফল্যের গল্প এখন সকলের মুখে মুখে।
বেলার জীবন ছিল এক কঠিন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। ২০০৯ সালে, যখন বেলার বয়স মাত্র ৬ বছর, তার বড় বোন আরিয়ানাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এরপর, ২০১১ সালে বাবা এক মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা যান।
শোকের এই গভীর ক্ষতগুলো কাটিয়ে ওঠার আগেই বেলা নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে চিকিৎসকেরা জানান, বেলা এক বিরল অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত, যার নাম ANCA-associated vasculitis।
এই রোগে শরীরের রক্তনালীগুলোতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এর ফলস্বরূপ, তার কিডনি বিকল হয়ে যায় এবং ডায়ালাইসিস শুরু করতে হয়।
চিকিৎসা চলাকালীন সময়েই আসে আরেক বিপর্যয়। কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রস্তুতি নেওয়ার সময়, বেলা মারাত্মকভাবে স্ট্রোকে আক্রান্ত হন। এরপরে, তিনি প্রায় এক মাস কোমায় ছিলেন।
চিকিৎসকেরা পর্যন্ত আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারা বেলার মায়ের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছিলেন, কিভাবে তাকে ডায়ালাইসিস থেকে সরিয়ে নেওয়া যায়, যাতে তার কিডনি ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু বেলার মা, ডিন হার্লি, দুই মেয়ের শোক একসঙ্গে সইতে রাজি ছিলেন না। তিনি মেয়ের পাশে অবিচল ছিলেন। হাসপাতালের বিছানায় বসে তিনি বেলাকে শোনাতেন পছন্দের গান, ব্রুনো মার্স এবং কেইশা কোলের গান।
অবশেষে, কোমা থেকে জেগে ওঠার পর বেলার জীবন নতুন মোড় নেয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠার এই সময়ে, বেলার মনে একটাই জেদ ছিল—বন্ধুদের মতো গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে হেঁটে নিজের সনদ নিতে হবে।
সে লক্ষ্যে পৌঁছাতে তিনি নিয়মিত ফিজিওথেরাপি শুরু করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক জাডিন হফ জানিয়েছেন, বেলা ছিলেন তার দেখা সবচেয়ে ইতিবাচক এবং কঠোর পরিশ্রমী রোগীদের মধ্যে একজন।
একদিকে যেমন চিকিৎসার ধকল, অন্যদিকে স্কুলের পড়া—সবকিছু সামলে বেলা প্রমাণ করেছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে কিছুই অসম্ভব নয়।
২০২৩ সালে বেলা কিডনি প্রতিস্থাপন করান এবং এরপর ধীরে ধীরে সেরে ওঠেন। একদিকে যেমন শারীরিক দুর্বলতা, তেমনই ছিল মনের জোর।
অবশেষে বহু প্রতীক্ষার পর, গত সপ্তাহে গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে মায়ের হাত ধরে মঞ্চে ওঠেন বেলা। সবার হাততালির মধ্যে তিনি যখন হেঁটে এসে তার ডিগ্রি গ্রহণ করেন, তখন যেন পুরো স্কুলের আকাশ আনন্দে ভরে গিয়েছিল।
বেলার এই অদম্য ইচ্ছাশক্তি অনেকের কাছেই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ভবিষ্যতে তিনি শিশুদের চিকিৎসার ওপর মনোযোগ দিতে চান এবং একজন ডাক্তার হতে চান। বেলা মনে করেন, “জীবনে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়, যদি নিজের ওপর বিশ্বাস থাকে।”
তথ্য সূত্র: পিপল