এস্টি লডার কোম্পানির প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) লিওনার্ড লাউডার আর নেই। ৯২ বছর বয়সে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। শনিবার, ১৪ই জুন পরিবার পরিবেষ্টিত অবস্থায় তিনি মারা যান।
সৌন্দর্য্য শিল্প এবং জনহিতকর কাজের জন্য তিনি সুপরিচিত ছিলেন।
১৯৪৬ সালে এস্টি ও জোসেফ লডার দম্পতি আনুষ্ঠানিকভাবে এস্টি লডার ব্যবসা শুরু করেন এবং লিওনার্ড ছিলেন তাদেরই সুযোগ্য পুত্র। ১৯৫৮ সালে তিনি এই ব্যবসায়ে যোগ দেন এবং বহু বছর ধরে সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইভলিন লডার। স্তন ক্যান্সারের সচেতনতা বৃদ্ধিতে গোলাপি ফিতা তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
নিউইয়র্ক শহরে ১৯৩৩ সালে লিওনার্ডের জন্ম। তার মা ছিলেন জোসেফিন এস্থার মেনৎজার এবং বাবা জোসেফ লাউটার।
সৌন্দর্য পণ্যের ব্যবসার সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্ক ছিল এবং সেই সূত্রে তিনি এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন। পরবর্তীতে এস্টি ও জোসেফ তাদের কোম্পানির ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে নামের পরিবর্তন করেন।
ব্রঙ্কস সায়েন্স হাই স্কুল থেকে পাশ করার পর, তিনি ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়ার হোয়ার্টন স্কুল থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৫৬ সালে তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট হিসেবে যোগ দেন।
সামরিক জীবন শেষে তিনি এস্টি লডারে যোগ দেন। শোনা যায়, প্রথমে তিনি এই কোম্পানিতে যোগ দিতে দ্বিধা বোধ করেছিলেন এবং নৌবাহিনীতে পুনরায় যোগ দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি এখানে যোগ দেন।
১৯৭২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি কোম্পানির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে তিনি সিইও হন এবং ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত এই পদে ছিলেন।
১৯৯৫ সালে তিনি চেয়ারম্যান এবং ২০০৯ সালে চেয়ারম্যান এমেরিটাস হন। একইসঙ্গে তিনি কোম্পানির চিফ টিচিং অফিসার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন।
লিওনার্ডের নেতৃত্বেই এস্টি লডার একটি বিশ্বব্যাপী কোম্পানিতে পরিণত হয়। তিনি প্রথম গবেষণা ও উন্নয়ন ল্যাব তৈরি করেন এবং নব্বইয়ের দশকে ম্যাক, ববি ব্রাউন ও অ্যাভেডার মতো অন্যান্য কোম্পানি অধিগ্রহণ করেন।
ফোর্বসের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে লিওনার্ডের সম্পদের পরিমাণ ছিল ১০.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা তাকে বিশ্বের ২৩৪তম ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত করে।
১৯৫৯ সালে ইভলিন হাউনারের সঙ্গে লিওনার্ডের বিবাহ হয় এবং তাদের দুই পুত্র সন্তান ছিল— উইলিয়াম ও গ্যারি লাউডার। ইভলিন একসময় শিক্ষকতা করতেন, পরে এস্টি লডারের সিনিয়র কর্পোরেট ভাইস প্রেসিডেন্ট হন এবং ক্লিনিক (Clinique) লাইন প্রতিষ্ঠা করেন।
এছাড়াও, তিনি স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বিষয়ক প্রচারে নেতৃত্ব দেন এবং গোলাপি ফিতার ধারণা দেন, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে পরিচিত।
লিওনার্ড ও ইভলিন একসঙ্গে নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন-কেটারিং হাসপাতালের সঙ্গে কাজ করেন এবং হাসপাতালের ইভলিন এইচ. লাউডার ব্রেস্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।
১৯৯৮ সালে লিওনার্ড ও তার ভাই রোনাল্ড আলঝেইমার্স ড্রাগ ডিসকভারি ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন।
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, এই ফাউন্ডেশন ১৯টি দেশে ট্রায়ালের জন্য ২০৯ মিলিয়ন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছে।
শিল্পকলার প্রতিও লিওনার্ডের গভীর অনুরাগ ছিল এবং তিনি ছিলেন একজন বড় সংগ্রাহক।
তিনি তার স্মৃতিচারণে লিখেছিলেন, পোস্টকার্ড সংগ্রহের মাধ্যমে তার এই শিল্পের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। পরবর্তীতে তিনি ১ লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি পোস্টকার্ড সংগ্রহ করেন।
এরপর ফাইন আর্টের দিকে মনোযোগ দেন।
তিনি আধুনিক শিল্পকলার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং ছোটবেলায় প্রায়ই সাবওয়ে করে সিনেমা দেখতে যেতেন। সিনেমা দেখার পরে তিনি গ্যালারিতে ঘুরতেন এবং ছবিগুলো উপভোগ করতেন।
তিনি বোস্টনের মিউজিয়াম অফ ফাইন আর্টস এবং নিউবেরি লাইব্রেরিতে তার কিছু সংগ্রহ দান করেন। তিনি হুইটনি মিউজিয়াম অফ আমেরিকান আর্টের প্রেসিডেন্ট ও চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
২০১৩ সালের এপ্রিলে তিনি নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টে ৮১টি কুবিস্ট আর্ট প্রদানের ঘোষণা করেন।
২০১১ সালে ইভলিনের মৃত্যুর পর ২০১৫ সালে লিওনার্ড জুডি এলিস গ্লিকম্যানকে বিয়ে করেন।
২০২০ সালে ব্রান্সউইক গ্রুপকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি আরও ভালো কিছু করতে পারতেন, তবে কোনো কিছু নিয়ে তার কোনো দুঃখ নেই।
লিওনার্ডের শোকসন্তপ্ত পরিবারে রয়েছেন তার ভাই, স্ত্রী এবং দুই ছেলে উইলিয়াম ও গ্যারি। তারা তাদের পিতার স্মৃতিচারণ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
উইলিয়াম তার বাবার সম্পর্কে বলেন, “তিনি ছিলেন সবচেয়ে পরোপকারী মানুষ। তিনি বিশ্বাস করতেন শিল্প ও শিক্ষা সবার জন্য এবং তিনি আলঝেইমার ও স্তন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সমর্থন জুগিয়েছেন। সর্বোপরি, আমার বাবা ছিলেন একজন দয়ালু মানুষ, যিনি সকলের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতেন। তার প্রভাব ছিল বিশাল।
গ্যারি বলেছেন, “তিনি কেবল সম্মানিত ও প্রশংসিতই ছিলেন না, বরং তার কর্মচারী ও সহকর্মীরাও তাকে ভালোবাসতেন। তার এই ভালোবাসা আমার কাছে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তার প্রয়াণে শোকাহত, তবে আমরা তার অসাধারণ জীবন, তার স্থায়ী অবদান এবং আমাদের মধ্যে তিনি যে মূল্যবোধ তৈরি করেছেন, তা উদযাপন করি। তাকে ভুলতে পারবো না।
তথ্য সূত্র: পিপলস