আকাশপথে বন্ধুত্ব: এক বিমানে দুই অচেনা নারীর অপ্রত্যাশিত মিল। কখন যে বন্ধুত্ব হয়ে যায়, তা হয়তো আমরা অনেক সময়ই টের পাই না।
তেমনই এক বন্ধুত্বের গল্প, যা শুরু হয়েছিল হাজারো ফুটের উপর, বিমানের দুই অপরিচিত যাত্রীর মধ্যে। যারা প্রথমে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত ছিল না, তাদের অপ্রত্যাশিত সাক্ষাতে কিভাবে বন্ধুত্ব হলো, সেই গল্প নিয়েই আজকের এই প্রতিবেদন।
ঘটনার সূত্রপাত হয় যখন সিডনি হোগারহাইডের ফ্লাইটটি প্রায় মিস হয়ে যাচ্ছিল। শার্লট শহরে ট্রাভার্স সিটি থেকে আসা তাদের ফ্লাইটটি প্রায় তিন ঘণ্টা দেরিতে ছাড়তে শুরু করে।
এর উপর ছিল মাত্র ৩০ মিনিটের একটি সংযোগকাল। কোনোরকমে তারা যখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের দরজার কাছে পৌঁছান, তখন ঘড়িতে বেলা ১১টা বেজে ২ মিনিট। সৌভাগ্যবশত, ফ্লাইট কর্তৃপক্ষ তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
বিমানের ইকোনমি ক্লাসের সিটে সিডনির পাশের আসনে বসা ছিলেন হেইলি কুল্পেপার। হেইলি একা ছিলেন, কারণ তার বয়ফ্রেন্ডকে প্রথম শ্রেণির টিকিট দেওয়া হয়েছিল।
সিডনি যখন হাঁপাতে হাঁপাতে আসনে বসলেন, তখন হেইলি তাকে শান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “ভয় নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে”।
আকাশে ওড়ার পরেই তাদের মধ্যে সৌন্দর্যের জগৎ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সিডনি সবসময় ভালোভাবে মেকআপ করতে পছন্দ করেন।
তিনি হেইলিকে প্রস্তাব করেন, “চলো, আমরা সবাই মিলে সাজগোজ করি।” হেইলি রাজি হয়ে যান। তারা তাদের মেকআপের সরঞ্জাম বের করেন এবং বিমানের ২৯ নম্বর সারি তাদের নিজস্ব বিউটি পার্লারে পরিণত হয়।
তারা তাদের মেকআপের জিনিসপত্র ভাগাভাগি করে নিলেন। ব্রাশ, প্যালেট, ফাউন্ডেশন—সবকিছুই একে অপরের সঙ্গে বিনিময় হতে লাগল। সিডনি জানান, তিনি তার ডার্ক সামার শেড আনতে ভুলে গিয়েছিলেন, তাই তারা একসাথে রং মিশিয়ে নিলেন।
আলাপচারিতার মধ্যে তারা তাদের জীবনের নানা দিক নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। তাদের এই সাজগোজের অভিজ্ঞতা যেন তাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি স্থাপন করে দেয়।
এরপর তারা জানতে পারেন, একই রিসোর্টে তাদের থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। সিডনি বলেন, “মেয়েদের গল্প তো চলতেই থাকবে, তাই না?”
একদিন সন্ধ্যায়, পুলের পাশে হেইলি তার বন্ধুদের সাথে ছিলেন, তখন সিডনি ক্যামেরা হাতে সেখানে হাজির হন। তিনি তাদের ছবি তোলেন এবং সেই ছবিগুলো হেইলির কাছে পাঠান।
পরের দিন, সিডনি তাদের বিমানে সাজগোজ করার ভিডিওটি টিকটকে আপলোড করেন। কেউই ভাবেনি, এই ভিডিওটি এত দ্রুত ভাইরাল হবে।
কয়েক দিনের মধ্যেই ভিডিওটিতে কয়েক মিলিয়ন ভিউ হয় এবং প্রচুর মানুষ তাদের বন্ধুত্বের প্রশংসা করে।
টিকটকের ভিডিওতে লেখা ছিল, “পান্তা কানায় যাওয়ার পথে এই অপরিচিতার সাথে দেখা। তার একটি ডিনার রিজার্ভেশন ছিল, আর আমার ছিল একটি গালা ডিনার, তাই আমরা ইকোনমি ক্লাসে বসে মেকআপ করি।
আমরা আমাদের সব মেকআপ সামগ্রী শেয়ার করি এবং শ্যাম্পেন অর্ডার করি। এটাই নারীত্ব। পুরুষরা এটা বুঝবে না।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর, তাদের বন্ধুত্বের গল্প সবার কাছে পৌঁছে যায়। বিভিন্ন ব্র্যান্ড তাদের সাথে যোগাযোগ করতে শুরু করে এবং তাদের উপহার পাঠাতে শুরু করে।
সবচেয়ে আনন্দের মুহূর্ত ছিল যখন হেইলির বাবা তাকে টেক্সট করে বলেছিলেন, “তুমি টিকটক-এ বিখ্যাত হয়েছ!”
আসলে, তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই নতুন বন্ধুত্ব। তারা দুজনেই এখন একে অপরের সাথে যোগাযোগ রাখেন এবং ভবিষ্যতে তাদের দেখা হওয়ার পরিকল্পনা করছেন।
এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, অপ্রত্যাশিতভাবেও বন্ধুত্ব হতে পারে, যা আমাদের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: পিপল