বিখ্যাত র্যাপ সঙ্গীতশিল্পী এবং উদ্যোক্তা শন ‘ডিডি’ কম্বস-এর বিরুদ্ধে আনা গুরুতর অভিযোগগুলোর শুনানি চলছে। যৌন ব্যবসা, মানব পাচার, অপহরণ, এবং আরও অনেক গুরুতর অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত এই প্রভাবশালী সঙ্গীত তারকার বিচার প্রক্রিয়া এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
এই মামলার শুনানিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যাদের জবানবন্দি পুরো মামলার মোড় ঘোরাতে পারে।
অভিযোগ উঠেছে, ডিডি কম্বস একটি অপরাধ চক্র গড়ে তুলেছিলেন, যেখানে নারীদের যৌনকাজে বাধ্য করা হতো। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছে।
কম্বস অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
মামলার প্রধান সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন পপ গায়িকা ক্যাসি ভেন্টুরা। তিনি ডিডি কম্বসের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে সম্পর্কে ছিলেন।
তাঁর সাক্ষ্যে উঠে এসেছে, ডিডি বিভিন্ন সময়ে শারীরিক নির্যাতন, ভয় দেখানো এবং ব্ল্যাকমেইল করে তাঁকে যৌনকাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করতেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হোটেল সহ দেশের বাইরেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ক্যাসি আরও বলেছেন, “এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছিলাম, যখন আমার কাছে আর কোনো বিকল্প ছিল না। ‘না’ বলার যে কত বড় পরিণতি হতে পারে, সে সম্পর্কেও আমার ধারণা ছিল না।”
২০১৬ সালের মার্চ মাসে লস অ্যাঞ্জেলের একটি হোটেলে ডিডি কম্বস, ক্যাসিকে মারধর করেন, যা হোটেল কক্ষের নিরাপত্তা ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল। আদালতে সেই ভিডিও বহুবার দেখানো হয়েছে।
ক্যাসি আরও অভিযোগ করেছেন, ২০১৮ সালে ডিডি তাঁকে ধর্ষণ করেন।
এই অভিযোগগুলো ডিডির বিরুদ্ধে আনা প্রধান অভিযোগগুলোর সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। তবে, ডিডির আইনজীবীরা ক্যাসি’র অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেছেন, তাঁদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও, ক্যাসি’র সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো তাঁর মাদকাসক্তি এবং ঈর্ষাপরায়ণতার ফল।
তাঁরা আরও দাবি করেন, ক্যাসি স্বেচ্ছায় এইসব যৌনকাজে অংশ নিয়েছিলেন।
আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হলেন ‘জেইন’ (আসল নাম প্রকাশ করা হয়নি), যিনি ডিডির সঙ্গে ২০২১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সম্পর্কে ছিলেন।
জেইনের সাক্ষ্যে জানা যায়, ডিডি তাঁকে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করতে চাপ দিতেন। মাদক সেবনের মাধ্যমে এই ধরনের সম্পর্কের সৃষ্টি করা হতো, যা তিনি ‘হোটেল নাইট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
জেইন জানান, তিনি প্রথমে এই ‘হোটেল নাইট’-এ অংশ নিতে চাননি, কিন্তু ডিডি তাঁকে আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় এবং তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি রাজি হন।
ডিডির প্রাক্তন কর্মী ‘মিয়া’ (আসল নাম গোপন রাখা হয়েছে) নামে আরেকজন সাক্ষী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মিয়া ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ডিডির ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেছেন, ডিডি তাঁর কর্মজীবনে একাধিকবার শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করেছেন। ডিডির ভয়ে তিনি মুখ খুলতে সাহস পাননি।
এই মামলার সঙ্গে জড়িত অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের মধ্যে রয়েছেন র্যাপার কিড কুডি। তিনি আদালতে জানান, ডিডি কম্বস, ক্যাসি ভেন্টুরার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কারণে তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়েছিলেন।
ক্যাপিকর্ন ক্লার্ক নামে ডিডির প্রাক্তন এক সহযোগী, আদালতে জানান, ২০১১ সালে ডিডি তাঁকে অপহরণ করে কিড কুডিকে ‘খুন করতে’ নিয়ে গিয়েছিলেন।
এছাড়াও, ঘটনার সঙ্গে জড়িত হোটেল কর্মী এডি গার্সিয়া সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, ২০১৬ সালে ক্যাসি ভেন্টুরার ওপর হামলার ভিডিও ডিডিকে সরবরাহ করার জন্য তিনি এক লক্ষ মার্কিন ডলার (বর্তমান বিনিময় হার অনুসারে প্রায় ১ কোটি ৯ লক্ষ টাকার বেশি) ঘুষ নিয়েছিলেন।
ডিডির আইনজীবীরা সাক্ষীদের দেওয়া তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা তাঁদের মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।
এই মামলার রায় কী হয়, সেদিকে এখন সবার নজর।
তথ্য সূত্র: সিএনএন