ইতালির পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে ফ্লোরেন্সের পরিচিতি অনেক। তবে যারা ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা চান, তাদের জন্য পার্মা হতে পারে চমৎকার গন্তব্য।
ইতালির ‘ফুড ভ্যালি’ নামে পরিচিত এমিলিয়া-রোমাগনা অঞ্চলের এই শহরটি তার ঐতিহাসিক গুরুত্ব, শিল্পকলা এবং অবশ্যই খাবারের জন্য বিখ্যাত।
**পার্মার আকর্ষণ: ফ্লোরেন্সের চেয়ে শান্ত এক শহর**
ফ্লোরেন্সের তুলনায় পার্মা অনেক শান্ত এবং নিরিবিলি। এখানে পর্যটকদের আনাগোনা তুলনামূলকভাবে কম থাকে, যা ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তোলে।
যারা ইতালির আসল স্বাদ পেতে চান, তাদের জন্য পার্মা আদর্শ জায়গা। এখানকার জীবনযাত্রার মানও বেশ উন্নত।
**খাবারের শহর: পারমিগিয়ানো রেগিয়ানোর জন্মস্থান**
পার্মার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এর খাদ্য সংস্কৃতি। আপনি যদি আসল পারমিগিয়ানো রেগিয়ানো চিজের স্বাদ নিতে চান, তাহলে পার্মা আপনার জন্য উপযুক্ত স্থান।
এই চিজ তৈরির প্রক্রিয়াটি বেশ কঠোর নিয়মের মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হয়। এমনকি এর উপাদান এবং উৎপাদনের স্থানও সুনির্দিষ্ট।
ঐতিহ্য মেনে, কোনো রকম কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার না করে, কয়েকশো বছর ধরে একই পদ্ধতিতে এই চিজ তৈরি করা হচ্ছে।
শুধু চিজ নয়, পার্মা ‘ফুড ভ্যালি’-র অংশ হওয়ায় এখানকার খাবারও অসাধারণ।
এখানকার স্থানীয় রেস্টুরেন্টগুলোতে উপাদেয় সব খাবার পাওয়া যায়। যেমন, ত্রাত্তোরিয়া আই ডুয়ে প্ল্যাটানি (Trattoria Ai Due Platani) এবং পার্মা রোত্তা (Parma Rotta) -র মত পরিবার-পরিচালিত রেস্টুরেন্টগুলোতে স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
এমনকি এখানকার জেলাতো (gelato) তৈরিতেও পারমিগিয়ানো রেগিয়ানো তৈরির দুধ ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও, পারমা হ্যাম (prosciutto di Parma) এবং মোডেনা অঞ্চলের ব্যালসামিক ভিনেগার-এর মতো স্থানীয় বিশেষত্ব তো রয়েছেই।
মোডেনা শহরটি বিখ্যাত শেফ মাসিমো বত্তুরার তিন-মিশেলিন তারকা সম্পন্ন রেস্টুরেন্ট, ওস্টেরিয়া ফ্রান্সেসকানার (Osteria Francescana) জন্য।
**শিল্পকলা ও ইতিহাসের শহর**
খাবারের পাশাপাশি পার্মার রয়েছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি। রেনেসাঁ যুগে ফার্নেস ডিউকদের শাসনামলে এই শহরের উন্নতি হয়।
ডিউকগণ ফার্নেস থিয়েটার এবং প্যালাটাইন লাইব্রেরির মতো বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করেন, যা পালাজো ডেলা পিলোটা জাদুঘর কমপ্লেক্সে আজও বিদ্যমান।
এখানে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির শিল্পকর্মও রয়েছে, যা ফ্লোরেন্সের তুলনায় অনেক শান্ত পরিবেশে উপভোগ করা যেতে পারে।
ফ্লোরেন্স রেনেসাঁ শিল্পের জন্য বিখ্যাত হলেও, পার্মাতেও এই সময়ে শিল্পকলার বিকাশ ঘটেছিল।
শিল্পী কোরেগিও এবং পারমিজিয়ানিনোর মতো স্থানীয় শিল্পীরা ক্যামেরা ডি সান পাওলোর অভ্যন্তরে অসাধারণ চিত্রকর্ম তৈরি করেছেন।
পার্মার জীবনযাত্রা বেশ সহজ। এখানকার রাস্তাগুলি সমতল হওয়ায় সাইকেলে ঘোরার সুবিধা আছে।
ঐতিহাসিক শহরটি পায়ে হেঁটে ঘুরেও এখানকার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
কোলাহলমুক্ত পরিবেশে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা অনেক আকর্ষণীয়।
যারা ইতালিতে একটি শান্ত, শান্তিপূর্ণ এবং একইসঙ্গে ঐতিহ্যপূর্ণ অভিজ্ঞতা লাভ করতে চান, তাদের জন্য পার্মা একটি আদর্শ শহর।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লেজার