লস অ্যাঞ্জেলেসের বেসবল মাঠে এক ব্যতিক্রমী ঘটনার জন্ম দিয়েছেন নেজা নামের একজন শিল্পী। তিনি, ১৩ই জুন, স্থানীয় ‘ডজার্স’ দলের একটি খেলার শুরুতে আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত ‘দ্য স্টার স্প্যাঙ্গেলড ব্যানার’-এর স্প্যানিশ সংস্করণ পরিবেশন করেন। এই ঘটনার পরেই আলোচনায় উঠে আসে তাঁর এই ভিন্ন পদক্ষেপ।
জানা গেছে, খেলা শুরুর আগে নেজাকে নাকি জাতীয় সঙ্গীতটি ইংরেজি ভাষায় গাওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কর্তৃপক্ষের সেই অনুরোধ উপেক্ষা করে স্প্যানিশ ভাষায় গানটি পরিবেশন করেন। খেলা শেষে নিজের বক্তব্যে নেজা জানান, তাঁর এই পদক্ষেপের মূল কারণ হলো, তিনি তাঁর ল্যাটিন আমেরিকান সংস্কৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা অনুভব করেন।
একইসঙ্গে, তিনি সম্প্রতি লস অ্যাঞ্জেলেসে অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর অভিযানগুলির প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
নেজা তাঁর এই ঘটনার কথা টিকটকে একটি ভিডিওর মাধ্যমে তুলে ধরেন। ভিডিওতে তিনি লেখেন, “দেখুন, ডজার্স আমাকে স্প্যানিশ ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত গাইতে নিষেধ করেছিল, অথচ রুজভেল্ট ১৯৪৫ সালে এই গানের স্প্যানিশ সংস্করণটি তৈরি করতে বলেছিলেন।”
নেজা আরও জানান, তিনি এই গানটি গেয়ে তাঁর অভিবাসী বাবা-মায়ের প্রতি সম্মান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, এই গানটি গাওয়ার মাধ্যমে তিনি ভালো একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন, যা তাঁর নিজের এবং তাঁর সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই ঘটনার পরে, ডজার্স কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, পরবর্তীতে দলের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নেজার এই পারফর্মেন্সের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং ভবিষ্যতে তাঁকে আবারও স্টেডিয়ামে স্বাগত জানানো হবে।
এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট লাতিন আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে ‘গুড নেইবার’ নীতি গ্রহণ করেন। এর অংশ হিসেবেই ১৯৪৫ সালে জাতীয় সঙ্গীতের স্প্যানিশ সংস্করণ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
পেরু-আমেরিকান সুরকার ক্লোটিল্ডে আরিয়াসের তত্ত্বাবধানে গানটির স্প্যানিশ সংস্করণ তৈরি করা হয়, যার শিরোনাম ছিল ‘এল পেন্ডন এস্ট্রেলাডো’।
অন্যদিকে, ডজার্সের খেলোয়াড় কিক হার্নান্দেজও লস অ্যাঞ্জেলেসে আইসিই-এর অভিযান নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লেখেন, “লস অ্যাঞ্জেলেস শহর এবং ডজার্স ভক্তরা আমাকে আপন করে নিয়েছে। আমি এই শহরে অভিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতি হওয়া অবিচার দেখে মর্মাহত।”
এই ঘটনার মাধ্যমে, খেলাধুলার মাঠও যে সামাজিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হতে পারে, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো।
তথ্য সূত্র: পিপল