আবহমান সৌন্দর্যের লীলাভূমি: উত্তর ক্যারোলিনার হ্যাটারেস দ্বীপ।
বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের মানুষেরা যারা প্রকৃতির শান্ত রূপ দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য একটি বিশেষ গন্তব্য হতে পারে উত্তর ক্যারোলিনার হ্যাটারেস দ্বীপ।
আটলান্টিক মহাসাগরের কোল ঘেঁষে, শান্ত সমুদ্র সৈকত আর আকর্ষণীয় ল্যান্ডস্কেপের এক অপূর্ব মিলনক্ষেত্র এই দ্বীপ।
যারা কোলাহলমুক্ত পরিবেশে প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য হ্যাটারেস দ্বীপ হতে পারে আদর্শ জায়গা।
দ্বীপটির প্রধান আকর্ষণ হল কেপ হ্যাটারেস ন্যাশনাল সিশোর, যা প্রায় ৭০ মাইল জুড়ে বিস্তৃত।
এখানে রয়েছে নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত, লবণাক্ত জলাভূমি আর সবুজ বনভূমি।
এতে একদিকে আটলান্টিক মহাসাগর, অন্যদিকে পামলিকো সাউন্ড – এই ভৌগোলিক অবস্থান এটিকে কায়াকিং, মাছ ধরা, এবং প্যাডেলবোর্ডিংয়ের জন্য আদর্শ করে তুলেছে।
এছাড়াও, এখানকার শক্তিশালী বাতাস হ্যাটারেস দ্বীপকে বিশ্বের অন্যতম সেরা কাইটবোর্ডিং গন্তব্য হিসেবে পরিচিত করেছে।
হ্যাটারেস দ্বীপের আকর্ষণ শুধু খেলাধুলা বা প্রকৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।
এখানকার প্রতিটি গ্রামের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য।
রডান্থ, ওয়েভস, সালভো, অ্যাভন, বাস্টন, ফ্রিসকো এবং হ্যাটারেস ভিলেজ – প্রত্যেকটির নিজস্ব সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য রয়েছে।
বাস্তনে রয়েছে বিখ্যাত কেপ হ্যাটারেস লাইটহাউস।
১৮৭০ সালে নির্মিত এই বাতিঘরটি আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু বাতিঘরগুলোর মধ্যে অন্যতম, যার উচ্চতা প্রায় ১৯৬ ফুট (৬০ মিটার)।
লাইটহাউসের চূড়ায় উঠে আসা যদিও বর্তমানে বন্ধ রয়েছে, তবে এর আকর্ষণ আজও অমলিন।
দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শন ও জাদুঘর।
বাস্টনের ‘লস্ট কলোনি মিউজিয়াম’-এ এখানকার আদি বাসিন্দাদের বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখা যায়।
এছাড়াও, ‘গ্রেভইয়ার্ড অফ দ্য আটলান্টিক মিউজিয়াম’ রয়েছে, যেখানে সমুদ্র ইতিহাসের নানা অজানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
হ্যাটারেস দ্বীপে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে।
আরামদায়ক হোটেলের পাশাপাশি এখানে ভ্যাকেশন হোম এবং ক্যাম্পিংয়েরও সুযোগ আছে।
সম্প্রতি, জোনাথন অ্যাডলারের ডিজাইন করা ‘এজক্যাম্প পামলিকো স্টেশন’ বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছে, যেখানে আধুনিক সব সুবিধা বিদ্যমান।
যারা দলবদ্ধভাবে বা লম্বা সময়ের জন্য থাকতে চান, তারা এয়ারবিএনবি অথবা ভার্বো থেকে ভ্যাকেশন হোম ভাড়া নিতে পারেন।
এছাড়া, ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস (এনপিএস)-এর তত্ত্বাবধানে এখানে ক্যাম্পিং করারও সুযোগ রয়েছে।
খাবার-দাবারের জন্য হ্যাটারেস দ্বীপে রয়েছে নানান বিকল্প।
বাস্টনের ‘অরেঞ্জ ব্লসম বেকারিতে’র অ্যাপেল আগলি (আপেল ফ্রাইটার) এবং অন্যান্য বেকারি আইটেমগুলো পর্যটকদের কাছে খুবই প্রিয়।
এছাড়াও, ‘টুকুয়ানা’র মত ফুড ট্রাকে মজাদার বার্গার, টেকো এবং ব্রেকফাস্ট স্যান্ডউইচ পাওয়া যায়।
যারা সি-ফুড পছন্দ করেন, তারা ‘দ্য ফ্রগি ডগ’-এর মেনু থেকে পছন্দের খাবার বেছে নিতে পারেন।
হ্যাটারেস দ্বীপ পরিদর্শনের সেরা সময় হল বসন্ত এবং শরৎকাল।
এই সময়ে আবহাওয়া বেশ মনোরম থাকে এবং পর্যটকদের আনাগোনাও কম থাকে।
তবে গ্রীষ্মকালে সমুদ্র সৈকতে সময় কাটানোর মজাই আলাদা।
হ্যাটারেস দ্বীপে পৌঁছানোর জন্য বিমানে করে নর্ফোক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (ওআরএফ) অথবা র্যালে-ডারহাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (আরডিইউ) নামতে পারেন।
বিমানবন্দর থেকে গাড়ি ভাড়া করে আপনি সহজেই দ্বীপে যেতে পারবেন।
অতএব, যারা প্রকৃতির নীরবতা ভালোবাসেন এবং সমুদ্রের কাছাকাছি কিছু দিন কাটাতে চান, তাদের জন্য হ্যাটারেস দ্বীপ হতে পারে একটি চমৎকার গন্তব্য।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল + লেজার।