দক্ষিণ আমেরিকার একটি অনাবিষ্কৃত রত্ন: গায়ানা, এক ফটোগ্রাফারের চোখে প্রকৃতির স্বর্গ।
দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ, যেখানে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, পেরুর মতো দেশগুলো পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত, সেখানে গায়ানা নামের একটি দেশ যেন এক লুকানো বিস্ময়। সবুজ অরণ্যে ঢাকা, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই দেশ, ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে।
সম্প্রতি, একজন খ্যাতিমান ফটোগ্রাফার, আইক ইদেয়ানি, গায়ানাতে কাটানো তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন।
ইদেয়ানি, যিনি নাইজেরিয়াতে জন্মগ্রহন করেছেন এবং বর্তমানে ব্রুকলিনে বসবাস করেন, পেশায় একজন ফটোগ্রাফার। তিনি সাধারণত ফ্যাশন এবং শহরের জীবন নিয়ে ছবি তোলেন।
কিন্তু গায়ানার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে, তিনি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন। গায়ানার গভীর জঙ্গলে, স্বচ্ছ নদীর তীরে, আর আকাশ ছুঁয়ে থাকা জলপ্রপাতের ছবি তোলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি।
গায়ানার প্রধান আকর্ষণ হলো এর বিশাল রেইনফরেস্ট বা বৃষ্টিবন। দেশটির প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে এই বনভূমি।
এখানে পাখির ৮০০-র বেশি প্রজাতি, সরীসৃপ ও উভচর শ্রেণির প্রায় ৩২০টি প্রজাতি, এবং বিভিন্ন ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণীর দেখা মেলে। এখানকার বন্যপ্রাণীর মধ্যে অন্যতম হলো জাগুয়ার, যা গায়ানার জাতীয় পশু।
এছাড়াও, ৮,০০০ এর বেশি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে, যা প্রতিনিয়ত প্রকৃতি প্রেমীদের আকৃষ্ট করে।
গায়ানার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কাইয়েটুর জলপ্রপাত (Kaieteur Falls)। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে একটি, যার উচ্চতা প্রায় ৭৪১ ফুট (২২৬ মিটার)।
পর্যটকদের জন্য গায়ানা এখনো ততটা পরিচিত নয়, তবে এখানে স্থানীয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের তত্ত্বাবধানে পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে উঠছে।
এর ফলে, পর্যটকরা সরাসরি স্থানীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং তাদের জীবনযাত্রায় সহায়তা করতে পারে। ভ্রমণ বিষয়ক সংস্থা কের অ্যান্ড ডাউনি (Ker & Downey)-এর পরিচালক এলিজাবেথ ফ্রেলস-এর মতে, গায়ানার পর্যটন স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তা করে।
পর্যটকদের জন্য গায়ানা ভ্রমণের কিছু সুবিধা রয়েছে। এখানকার সরকারি ভাষা ইংরেজি, যা ভ্রমণকে সহজ করে তোলে।
এছাড়া, নিউ ইয়র্ক সহ বিভিন্ন শহর থেকে গায়ানার রাজধানী জর্জটাউনে সরাসরি ফ্লাইট পাওয়া যায়।
তবে, গায়ানা ভ্রমণের আগে কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। এখানে উন্নত মানের হোটেল বা বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সুযোগ কম।
যাতায়াতের জন্য পুরনো মডেলের বিমান এবং দুর্বল সড়কের কারণে ভ্রমণের পথ কঠিন হতে পারে। পোকামাকড়ের উপদ্রব এবং গরম আবহাওয়াও এখানে একটি সাধারণ বিষয়।
ফটোগ্রাফার আইক ইদেয়ানি গায়ানাতে কাটানো এক সপ্তাহে সেখানকার প্রকৃতিকে ক্যামেরাবন্দী করেছেন। বিশেষ করে জলের মধ্যে ফুটে ওঠা ভিক্টোরিয়া অ্যামাজোনিকা নামের পদ্ম ফুলের ছবি তোলার অভিজ্ঞতা তার কাছে অবিস্মরণীয়।
গভীর রাতে যখন এই ফুলগুলো ফোটে, তখন চারপাশের দৃশ্য অন্যরকম এক রূপ নেয়।
যদি আপনি প্রকৃতির কাছাকাছি যেতে ভালোবাসেন, স্থানীয় সংস্কৃতিকে সম্মান করেন এবং নতুন কিছু অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান, তাহলে গায়ানা হতে পারে আপনার জন্য আদর্শ গন্তব্য।
তথ্যসূত্র: ট্রাভেল + লেজার