ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের একটি নাইটক্লাবের ছাদ ধসে ২৩০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় ক্লাবটির মালিক এবং তার বোনকে গ্রেপ্তার করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। গত ৮ এপ্রিল রাজধানী সান্টো ডোমিঙ্গোর ‘জেট সেট’ নাইটক্লাবের ছাদ ভেঙে পড়ার ঘটনার দুই মাস পর, গত ১২ জুন আন্তোনিও এসপায়াত এবং মারিবল এসপায়াতকে হেফাজতে নেওয়া হয়।
সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের জন্য ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে।
ডমিনিকান রিপাবলিকের অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের (সরকারি কৌঁসুলি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “উভয় অভিযুক্ত ক্লাবটির ছাদ ধসে পড়া ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এর ফলেই ২৩৬ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ১৮০ জনের বেশি।”
উল্লেখ্য, ঘটনার সময় জনপ্রিয় মেরিংগু সঙ্গীতশিল্পী রুবি পেরেজ ওই নাইটক্লাবে পারফর্ম করছিলেন। ছাদ ধসে নিহতদের মধ্যে তিনিও ছিলেন।
এছাড়া, সাবেক বেসবল খেলোয়াড় অক্টাভিও ডোটেল ও টনি ব্ল্যাঙ্কো এবং নেলসি ক্রুজ নামের একজন সরকারি কর্মকর্তাও নিহত হন। জানা গেছে, ওই রাতে ক্লাবটিতে প্রায় ৫১৫ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এই দুর্ঘটনার পর ক্লাব মালিক আন্তোনিও এসপায়াত জানিয়েছিলেন, তিনি তদন্তে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, “আমি সবকিছু মোকাবেলা করব। আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
ঘটনার কয়েকদিন পর এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি নিহতদের পরিবারের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “আমি অত্যন্ত দুঃখিত। আমি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত।”
জানা যায়, আন্তোনিও এবং মারিবলের মা ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তীতে এটি তাদের হাতে আসে।
ঘটনার দিন ক্লাবটি তাদের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করছিল। আন্তোনিও স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে জানিয়েছিলেন, “ছাদটি যে ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, সে বিষয়ে কোনো সতর্কবার্তা ছিল না।”
যদিও জানা যায়, ক্লাবটির ছাদে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের কারণে দীর্ঘদিন ধরে জলীয় বাষ্প জমার সমস্যা ছিল।
ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট লুইস আবিনাদার এক বিবৃতিতে এই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, “জেট সেট নাইটক্লাবে সংঘটিত এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা ঘটনার শুরু থেকেই এর ওপর নজর রাখছি। উদ্ধারকারী দলগুলো আহতদের উদ্ধারে অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। আমরা শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।”
সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ক্লাব মালিক আন্তোনিও এসপায়াত ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী।
তার মালিকানায় বেশ কয়েকটি বিনোদন কেন্দ্র এবং ডজনখানেক রেডিও স্টেশন রয়েছে। তারা আরও অভিযোগ করেছেন, এসপায়াত ভাই-বোনেরা এই মামলার সাক্ষীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছিলেন।
এই দুর্ঘটনার কারণ এখনো তদন্তাধীন রয়েছে।
এই ঘটনার পর, বাংলাদেশেও ভবন নির্মাণের নিরাপত্তা মান নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
তথ্য সূত্র: পিপল