ঘুমের অভাব মেটাতে অভিনব এক জ্যাকেট তৈরি করেছে জাপানের একটি ডিজাইন সংস্থা। ‘কনএল’ (Konel) নামের এই সংস্থাটি এনটিটি ডিএক্স পার্টনার্সের (NTT DX Partners) সঙ্গে মিলিতভাবে তৈরি করেছে ‘জেডজেডএন’ (ZZZN) নামের এই বিশেষ জ্যাকেট।
মূলত ঘুমের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতেই এই জ্যাকেটের উদ্ভাবন।
জাপানে ঘুম-সংক্রান্ত সমস্যা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়, ঘুমের সময় এবং মানের দিক থেকে দেশটি পিছিয়ে আছে।
এই পরিস্থিতিতে, কনএল-এর প্রধান শিল্পী পরিচালক ডাই মিয়াতা মনে করেন, মানুষের ঘুমের ধারণাটিকে নতুনভাবে দেখা দরকার। তাঁর মতে, “ঘুম একটি ব্যক্তিগত বিষয়।
কাউকে জোর করে ঘুম পাড়ানো যায় না। তাই আমরা এমন কিছু তৈরি করতে চেয়েছি যা মানুষকে নিজের মতো করে ঘুমাতে সাহায্য করবে।”
জেডজেডএন জ্যাকেটটি সাধারণ শীতের পোশাকের মতোই, তবে এর কিছু বিশেষত্ব রয়েছে।
পরিধানকারীর হৃদস্পন্দন এবং শরীরের তাপমাত্রা মাপার জন্য একটি স্মার্ট রিং ব্যবহার করা হয়।
এই তথ্য বিশ্লেষণ করে জ্যাকেটটি আলো এবং শব্দের মাধ্যমে ঘুম আনতে সাহায্য করে। ঘুমের জন্য এটি লাল আলো ব্যবহার করে, আর জেগে ওঠার জন্য ব্যবহার করে নীল আলো।
এছাড়াও, এটি মস্তিষ্কের তরঙ্গকে প্রভাবিত করতে বিশেষ ধরনের “নিউরোমিউজিক” বাজায়।
জ্যাকেটটির নকশা জাপানের ঐতিহ্যবাহী ‘যোগী’ পোশাক থেকে অনুপ্রাণিত, যা এক ধরনের আরামদায়ক শীতের কিমোনো। মিয়াতার মতে, এই জ্যাকেট পোশাক এবং বিছানার একটি সংমিশ্রণ।
জ্যাকেটটির উৎপাদন এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে, এটি ২০২৩ সালের মিলান ডিজাইন সপ্তাহে প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল।
এরপর, আগামী ২০২৫ সালের ওসাকা এক্সপোতে (Expo 2025 Osaka) দর্শনার্থীরা এটি পরখ করার সুযোগ পাবেন।
মিয়াতা আশা করেন, এই উদ্ভাবন মানুষের মধ্যে ঘুমের বিষয়ে আগ্রহ বাড়াবে এবং বিশ্রাম নেওয়ার নতুন উপায় নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।
ঘুমের অভাব শুধু জাপানেই নয়, বিশ্বের অনেক দেশেই একটি সমস্যা। সম্প্রতি জানা গেছে, ঘুমের অভাবে বছরে প্রায় ১৩৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হয় জাপানের, যা দেশটির জিডিপি-র প্রায় ৩ শতাংশ।
অল্প ঘুমের কারণে কর্মক্ষমতা কমে যাওয়া, সড়ক দুর্ঘটনা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাও বাড়ে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত ঘুম মনোযোগ, মেজাজ এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে পারে।
তবে, দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমালে ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটতে পারে এবং ঘুম থেকে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে।
এই জ্যাকেট উদ্ভাবনের মূল উদ্দেশ্য হলো ঘুমের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা।
মিয়াতা বলছেন, “আমরা এমন একটি সংস্কৃতি তৈরি করতে চাই যেখানে ঘুমের মূল্য দেওয়া হয়।”
ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তি পোশাক প্রস্তুতকারকদের দ্বারা গ্রহণ করা হতে পারে এবং বিদ্যমান পোশাকের সাথেও যুক্ত করা যেতে পারে।
এর ফলে ঘুমের ধারণা এবং ঘুমের পোশাকের মান নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন